স্কুলপর্যায়ে গণিত
বর্তমান সরকারি দল ক্ষমতায় আসার পর অতি অল্প সময়ের মধ্যে একটি শিক্ষানীতি প্রণীত হয়। বলা যেতে পারে, এটাই বাংলাদেশের ৪০ বছরে প্রথম শিক্ষানীতি, যা জাতীয়ভাবে গৃহীত এবং যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বর্তমান সরকারি দলের মেয়াদ শেষ হবে। তাই সরকারি সব চেষ্টা চলছে, যাতে তার আগেই নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা যায়। ২০১৩ সালে জানুয়ারি থেকে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীতে নতুন কারিকুলাম ও পাঠ্যসূচি প্রবর্তন করা হবে এবং সে উদ্দেশ্যে নতুন পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করে পাঠ্যপুস্তক রচনার কাজ চলছে বলে জানা যায়। সবই ঠিক আছে, তবে পাঠ্যসূচি প্রণয়নে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া হয়নি বলে যথেষ্ট ত্রুটি ও অসংগতি রয়ে গেছে। তাই বর্ণিত তিনটি শ্রেণীর গণিতের পাঠ্যসূচি পুনর্বিবেচনা জরুরি প্রয়োজনে বলে মনে করছি।
আমি এ দেশের একজন সামান্য গণিত শিক্ষক। ১৯৫৬ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত কলেজের গণিত শিক্ষক পদে কর্মরত ছিলাম। ১৯৬৯ থেকে অধ্যাপনার সঙ্গে গণিতবিষয়ক পাঠ্যপুস্তক রচনার কাজ করতে থাকি। নবম-দশম থেকে স্নাতক-অনার্স শ্রেণী পর্যন্ত বেশ কিছু পাঠ্যপুস্তক রচনার কাজ করেছি।
ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর জন্য প্রণীত যে পাঠ্যসূচি অনুসারে পাঠ্যপুস্তক রচনার কাজ চলছে, সেই পাঠ্যসূচি দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। সেখানে যা দেখেছি তার সারমর্ম এককথায় বলতে হয়, গণিত বিষয়ে অশিক্ষিত একটি জাতি তৈরি করার ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। গণিত ও বিজ্ঞানে পৃথিবীর সব দেশ এগিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাদের অগ্রগতি ধারাবাহিক। আমরা ত্বরিত অগ্রগতির লোভে যদি অষ্টম শ্রেণীর বিষয় ষষ্ঠ শ্রেণীতে, নবম শ্রেণীর বিষয় সপ্তম শ্রেণীতে আনার উদ্যোগ নিই, তাহলে সেটা একটি ভারসাম্যহীন পাঠ্যসূচি হবে।
কয়েকটি বিষয়ের প্রতি দেশের খ্যাতনামা গণিত শিক্ষক ও গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো।
প্রস্তাবিত গণিত পাঠ্যসূচিতে ষষ্ঠ শ্রেণীর দ্বিতীয় অধ্যায়: ২ ছিল অষ্টম শ্রেণীতে, ৪ ছিল সপ্তম শ্রেণীতে, তৃতীয় অধ্যায়: সম্পূর্ণ নতুন বিষয়, যা শিক্ষকেরা অনেকেই বোঝেন না, অষ্টম অধ্যায়: পরিসংখ্যান ছিল অষ্টম শ্রেণীতে।
সপ্তম শ্রেণীর প্রথম অধ্যায়: ১ ছিল অষ্টম শ্রেণীতে, ২ ছিল নবম শ্রেণীতে, ৬ সম্পর্কে শিক্ষকদের কোনো ধারণা নেই, তৃতীয় অধ্যায়: ১ ছিল অষ্টম শ্রেণীতে, সপ্তম অধ্যায়: ৩ ছিল অষ্টম শ্রেণীতে, নবম অধ্যায় ৫, ৬ ছিল নবম শ্রেণীতে, দশম অধ্যায় সাদৃশ্য ছিল নবম শ্রেণীতে, একাদশ অধ্যায়: ছিল অষ্টম শ্রেণীতে।
অষ্টম শ্রেণী প্রথম অধ্যায় সম্পর্কে শিক্ষকেরা কিছুই জানেন না, দ্বিতীয় অধ্যায়: ছিল নবম শ্রেণীতে, সপ্তম অধ্যায়: ছিল নবম শ্রেণীতে, নবম অধ্যায়: ৩ ছিল নবম শ্রেণীতে, একাদশ অধ্যায়: ছিল নবম শ্রেণীতে।
১৯৯৬ সালে প্রবর্তিত পাঠ্যসূচি অনুসারে দেশের সিংহভাগ শিক্ষককে বিগত দেড় দশকেও প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হয়নি, তাই গ্রামের অধিকাংশ স্কুলেই গণিতের সম্পূর্ণ সিলেবাস পড়ানো হয় না। শিক্ষক যে বিষয় সঠিক জানেন না, সেটা বাদ থাকে। শহরে ছেলেমেয়েদের কোচিং সেন্টারে পাঠানো হয়, তাই স্কুলে কি হচ্ছে না হচ্ছে, তা নিয়ে বাবা-মেয়েরা তেমন ভাবেন না। গণিতের পাঠ্যসূচিকে যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তাতে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সব শ্রেণীর পাঠ্যসূচি একত্রে সমন্বয় করা দরকার ছিল। এ অবস্থায় ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর পাঠ্যসূচির সঙ্গে নবম-দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠ্যসূচির সমন্বয় করে একটি সুষম পাঠ্যসূচি প্রণয়নের ব্যবস্থা, পাঠ্যসূচি কার্যকর করার আগেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সুলিখিত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের ব্যবস্থা করার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করে সবিনয় অনুরোধ করছি। প্রয়োজনবোধে গণিত বিষয়ের নতুন পাঠ্যসূচি ২০১৪ সালে জানুয়ারিতে কার্যকর করে অন্য সব বিষয় ২০১৩ থেকে কার্যকর করা যেতে পারে।
প্রফেসর হারুনুর রশীদ
মিয়াপাড়া রোড, খুলনা।
No comments:
Post a Comment