রাজধানীতে ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করে, তার ৮৭ শতাংশ ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা হয়। মাত্র ১৩ শতাংশ পানি নদী থেকে শোধন করে সরবরাহ করা হয়। তবে নিষ্ঠুর বাস্তবতা হচ্ছে, ঢাকার আশপাশের কোনো নদীর পানিই এখন শোধনের অবস্থায় নেই। কারণ, এই নদীগুলোর দুই পাড় ঘেঁষে অসংখ্য শিল্প ও কল-কারখানা গড়ে উঠেছে, এসব কারখানার অধিকাংশ বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ইটিপি স্থাপন না করেই অপরিশোধিত অবস্থায় নদীতে ফেলে দিচ্ছে। ফলে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু নদী_কোনোটির পানিই আর ব্যবহার উপযোগী নেই। নদী তীরবর্তী মানুষগুলো এই বর্জ্যমিশ্রিত পানি ব্যবহার করে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এমনকি মাত্রাতিরিক্ত কেমিক্যাল মিশিয়েও ওই পানি পরিশোধন করা যাচ্ছে না। আবার বিশুদ্ধ পানির নামে বোতলজাত ওয়াসার দূষিত পানি পান করেও রোগাক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই।
ওদিকে ক্রমাগত গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি উত্তোলন করতে থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও ক্রমেই নেমে যাচ্ছে, যার ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহ, অর্থাৎ ভবনধস কিংবা ভূমিকম্পে রাজধানী তছনছ হওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই প্রবল হচ্ছে।
এ অবস্থায় সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন। ট্রলি বা গাড়িতে করে পানি সরবরাহ করে কোনো দিন পানির সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়। প্রথমেই অপরিকল্পিত নগরায়ণ বন্ধ করতে হবে। গ্রামগুলো স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে হবে, যাতে ছিন্নমূল মানুষরা আর মিছে মরীচিকার পেছনে ছুটতে ছুটতে ঢাকামুখী না হয়। রাজধানীর মধ্যে ও আশপাশে যেসব খাল ও প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো ভরাট করা হচ্ছে, সেগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে। এগুলো আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ, এগুলো আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। যদি দৃঢ়তার সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতিসাধন বন্ধ করা যায়, তাহলেই কেবল পানি সংকটের স্থায়ী সমাধান হবে, নইলে নিজেদের পাতানো ফাঁদে নিজেদেরই আটকে পড়তে হবে।
সতীশ চন্দ্র সরকার
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, বাউফল, পটুয়াখালী।
No comments:
Post a Comment