মুক্তিযোদ্ধারা কি সত্যি আশার আলো দেখবেন?
২৫ মার্চ ২০১২ কালের কণ্ঠে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট সম্পর্কে একটি বিশাল প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। '৩২ স্থাপনার ২৯টি নেই, পড়ে আছে কেবল জমি' শিরোনামের প্রতিবেদনটি মনোযোগ সহকারে পাঠ করেছি। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট একটি ডুবন্ত জাহাজ। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭২-এর প্রেসিডেন্ট অর্ডার ৯৪-এর মাধ্যমে। ১৯৭৩-এর অক্টোবরে মোট ২৬টি বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠান নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, 'প্রতিটি প্রতিষ্ঠান লাভজনক। এসব প্রতিষ্ঠানের আয় দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের খরচ নির্বাহ হবে, প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে আরো প্রতিষ্ঠান দেওয়া হবে'। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরও ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত কল্যাণ ট্রাস্টের নিজস্ব আয় দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা, চিকিৎসা খরচ, সন্তানদের শিক্ষা ভাতা প্রদান করা হতো। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট তিন হাজারের মতো শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সহায়তা প্রদান করত তখন।
১৯৭৭ সাল থেকে কী হয়ে গেল কিছুই বোঝা গেল না! জে. জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা-রাজাকারদের সমন্বয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করে দেশ পরিচালনা করছিলেন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা নিয়মিত বঙ্গভবনে আসা-যাওয়া করতেন। তাঁরা রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করলেন কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক প্রদেয় ভাতা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যেন দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতি মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদন মঞ্জুর করলেন। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে সামরিক কর্মকর্তার সমাহার ঘটান এবং মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে দুর্নীতি ও লুটপাট শুরু হয় অতিমাত্রায়। সে অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। স্মরণ রাখা দরকার, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৯০ শতাংশ ছিলেন গরিব মানুষের সন্তান। তাঁদের সম্পর্কে প্রতিবেদনে কিছু উল্লেখ নেই। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারকে সরকারি কোষাগার থেকে অর্থ দিয়ে যথার্থ সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। যত ঝামেলা অক্ষত সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে। মাসিক দুই হাজার টাকা ভাতা প্রদান করতে বাজেটে ৩৬০ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে সংবাদে বলা হয়েছে। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জাতীয় বাজেটে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিলে অসুবিধা কোথায়? বাজেটে যথাযথ বরাদ্দ দিলে কারো আপত্তি থাকার কথাও নয়। সরকার ও দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, দেশপ্রেমিক সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা বড় অসহায়, তাঁদের জন্য এখনই কিছু করতে হবে; সবাই বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন আর বাঁচবেনই বা কদিন?
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও কল্যাণ ট্রাস্ট দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ হবে না। অবিলম্বে দুই প্রতিষ্ঠানের বিলুপ্তি ঘোষণা করা উচিত। কল্যাণের বদলে যেখানে অকল্যাণ হয় সে প্রতিষ্ঠান রাখার দরকার কী? দুই প্রতিষ্ঠানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজারদরে বিক্রি করলে তিন-চার হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে; সে টাকা সরকারি কোষাগারে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করা যেতে পারে। তা করা হলে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা উপকৃত হবেন।
আবুল কাশেম চৌধুরী
সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিরক্ষা সংসদ, কেন্দ্রীয় কমিটি।
No comments:
Post a Comment