Wednesday, April 18, 2012

দীর্ঘদিনের জনদাবি পদ্মা সেতু

দীর্ঘদিনের জনদাবি পদ্মা সেতু
পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জনপদের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতার চার দশকেও তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। নব্বইয়ের দশকের শেষাংশে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করার মাধ্যমে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন সাধন করতে পারলেও পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। পদ্মা সেতু নির্মাণ বর্তমান মহাজোট সরকারের একটি অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। এরই মধ্যে সরকারের তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ায় তা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ থেকেই যায়। সেতু নির্মাণে প্রাথমিক যে ব্যয় পরিকল্পনা ছিল, বর্তমানে তার পরিমাণও অনেক বেড়ে গেছে। তাই আর বিলম্ব না করে এবং বাজেট অস্বাভাবিকভাবে না বাড়িয়ে যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজটি সম্পন্ন করা হয় সেটিই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
সরকারের সামনে যে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাগুলো রয়েছে, সেগুলোকে কার্যকর করতে হলে, বিশেষ করে ট্রান্স-এশিয়ান রুট বাস্তবায়ন করতে হলে পদ্মা সেতু নির্মাণের কোনো বিকল্প নেই। মংলা সমুদ্রবন্দরের সুফল পেতে হলেও পদ্মা সেতু জরুরি। আর তখন শুধু অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ নয়; ভারত, নেপাল, ভুটানের সঙ্গেও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়বে। সেই সম্পর্ক থেকে বাংলাদেশ আর্থিকভাবেও লাভবান হবে। ফলে ৫.৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ, ২৫ মিটার প্রশস্ত ও চার লেনবিশিষ্ট এই সেতু শুধু বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নেই অবদান রাখবে না, এটি হতে পারে এ অঞ্চলের কয়েকটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেরও অন্যতম সূত্র। পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন বাংলাদেশের সব এলাকার সুষম উন্নয়নই নিশ্চিত করবে না, জাতীয় অর্থনীতির জন্যও আশীর্বাদ বয়ে আনবে। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাবে বলে আশা করা হয়েছিল। আশা করা হয়েছিল, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুটি বিভাগ খুলনা ও বরিশাল এবং ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ীর মানুষের দীর্ঘদিনের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে। একটি সেতু কতটা প্রয়োজন, তা যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের আগে-পরের পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করলেই স্পষ্ট হয়ে যায়।
বর্তমান সরকারেরও একটি উল্লেখযোগ্য অঙ্গীকার পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন। কিন্তু এখন পর্যন্ত মূল সেতু, নদীশাসন, টোল প্লাজা ও সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ পদ্মা প্রকল্পের ছয়টি দরপত্রের কার্যক্রমই শেষ হয়নি। অথচ দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগে ছেয়ে গেছে প্রকল্পটি।
বর্তমান সরকারেরও রয়েছে দুর্নীতিবিরোধী স্লোগান ও অঙ্গীকার। আমি চাই, সরকার দুর্নীতিমুক্ত-স্বচ্ছ অবস্থান প্রমাণে সফল হোক। তারা নিজেদের স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত প্রমাণ করতে পারলে অবশ্যই আবার আশার আলো দেখা দেবে। পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক সংযোগ যেমন গড়ে উঠবে, তেমনি উন্নয়নের ক্ষেত্রে ওই এলাকার পিছিয়ে পড়ার দুর্গতি রোধ হবে। বিনিয়োগ ক্ষেত্রে সৃষ্টি হবে ইতিবাচক পরিবেশ। দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে মংলা বন্দরের ব্যবহারও বাড়বে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপও কমানো সম্ভব হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকার যেহেতু প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সেহেতু প্রতিকূলতা জয় করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
কাজী সিরাজুল ইসলাম
একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য
ফরিদপুর-১।

No comments:

EID MUBARAK to everybody