সমাজে নীতি-নৈতিকতার বিপরীত যা কিছু তা-ই হলো দুর্নীতি; যার অর্থ কু-অভ্যাস
ও খারাপ নীতি। এটি এমন অবৈধ লেনদেন, যা অন্যায় ও গোপনীয়ভাবে দুই বা ততোধিক
ব্যক্তির মধ্যে সম্পাদিত হয়। যে জীবনাচরণ বা বদ-অভ্যাস ব্যক্তিগত জীবনে
ভয়াবহ অকল্যাণ বয়ে আনে এবং সমাজকে অত্যন্ত কলুষিত করে, সেই দুর্নীতি আজ
দেশব্যাপী একটি ভয়ংকর সামাজিক ব্যাধি হিসেবে রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রসারিত
হয়েছে। সমাজের সব ক্ষেত্রে কমবেশি দুর্নীতির অস্তিত্ব বিরাজমান। প্রত্যেক
মানুষকে আল্লাহ তা’আলা ভালো-মন্দের পার্থক্যবোধ, ভালোকে ভালো জানা ও মন্দকে
মন্দ জানার অনুভূতি উপলব্ধি করতে দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে মানুষের অনৈতিক
কর্মকাণ্ডের ফলে ভূপৃষ্ঠে যাবতীয় মন্দ, দুষ্কর্ম ও দুর্নীতির আবির্ভাব
ঘটেছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ মানুষের প্রতি কোনো জুলুম করেন
না, বরং মানুষই নিজের ওপর জুলুম করে ও নিজের ক্ষতি সাধন করে।’ (সূরা ইউনুস,
আয়াত-৪৪)
দুর্নীতি নামক ঘৃণ্য ব্যাধি শুধু দেশ ও জাতি নয়, দুর্নীতিবাজদেরও অনিবার্য ধ্বংস ডেকে আনে। ঘুষ-দুর্নীতি সমাজের নৈতিকতার ভিত্তি ও মানুষের মানবিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দেয়। দুর্নীতিবাজেরা অবৈধভাবে অন্যের অর্থবিত্ত আত্মসাৎ, লুটপাট ও জবরদখল করলেও যথাযথভাবে সেই সম্পদ ভোগ করতে পারে না। বরং তারা অবৈধ সম্পদের ক্ষমতার দাপটে মানবতা বিধ্বংসী ও নৈতিকতা বিবর্জিত চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, সুদ, ঘুষসহ সামাজিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হয়। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’আলা সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন, ‘জলে-স্থলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি ছড়িয়ে পড়ছে, যার ফলে আল্লাহ তাদের কিছু কিছু কাজের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সূরা আর-রুম, আয়াত-৪১)
ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইসলামের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। দুর্নীতির মূল উৎস ঘুষ ও উৎকোচ গ্রহণ করে দুর্নীতিবাজেরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে জনসাধারণের অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ, প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে অবহেলা এবং স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পাদন করে থাকে। দুর্নীতির প্রভাবে সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব গঠিত ও বিকশিত হতে পারে না। সমাজজীবনে সৎ, যোগ্য ও নীতিবান ধর্মভীরু মানুষ সীমাহীন দুর্নীতির শিকার হয়ে নীরবতা পালনে বাধ্য হয়। এভাবে ঘুষ ও দুর্নীতি সামাজিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত, কলহ-বিবাদ তথা সন্ত্রাস সৃষ্টি করে মানুষের নীতি, আদর্শ ও মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ডেকে আনে। তাই পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’আলা এমন অবৈধ উপায়ে হারাম পন্থায় সম্পদ অর্জন ও ভোগ করা নিষিদ্ধ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইসলামের মূল নীতিমালা ঘোষণা করে বলেছেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনেশুনে অবৈধ পন্থায় আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে বিচারকদের হাতে তুলে দিয়ো না।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৮)
ইসলামে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ন্যায্য পারিশ্রমিকের অতিরিক্ত কোনো উপহার বা উপঢৌকন নিতে নিষেধ করা হয়েছে। কোনো লোভী মানুষকে যখন বেশি পাওয়ার লালসা পেয়ে বসে, তখন সে ধর্ম-কর্ম ভুলে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে অবৈধভাবে অর্থ-সম্পদ অর্জনে উন্মত্ত হয়ে পড়ে। যে সমাজে নীতি-নৈতিকতা, সততা ও যোগ্যতার চেয়ে ধন-সম্পদকে মর্যাদার মাপকাঠি বিবেচনা করা হয়, সেখানেই দুর্নীতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাই সমাজ থেকে সব ধরনের দুর্নীতি দমনের জন্য সর্বপ্রথম মানুষের মধ্যে ইসলামের আদর্শ নৈতিকতার বিকাশ ঘটাতে হবে এবং আল্লাহ ও পরকালের ভয় সদাজাগ্রত করতে হবে। নীতি ও দুর্নীতির ফয়সালা করার জন্য একটি নৈতিক আদর্শের প্রয়োজন।
কোনো কাজের জন্য যাকে মানুষ নিযুক্ত করবে, তাকে যথাযথ পারিশ্রমিক দেওয়া হবে, এর ওপর সে যা কিছু গ্রহণ করবে তা-ই হলো উৎকোচ। প্রাক-ইসলামী যুগে উৎকোচ গ্রহণ করা নিত্যনৈমিত্তিক কাজ ছিল। বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাদের আল্লাহর নিষেধবাণী শুনিয়ে দিলেন। ঘুষ দেওয়া-নেওয়া হচ্ছে দুর্নীতির মূল উৎস বা অন্যতম মাধ্যম। যে সমাজ ও রাষ্ট্রে ঘুষ আদান-প্রদান করা হয়, সে সমাজে কখনো শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুষ-দুর্নীতি উৎখাতের জন্য একে অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ আখ্যা দিয়ে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন, ‘ঘুষ গ্রহীতা ও ঘুষদাতা উভয়ের ওপর আল্লাহর অভিশাপ।’ (বুখারি ও মুসলিম) এদের কঠিন পরিণতি সম্পর্কে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়ই জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে।’ (তাবারানি)
দুর্নীতির অন্যতম শাখা হচ্ছে স্বজনপ্রীতি। এতে সমাজজীবনে অযোগ্য কর্তৃত্ব ও অসৎ নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। দেশের প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো বিনষ্ট হয়। স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির ফলে জাতীয় জীবনে নানা রকম অনাসৃষ্টি ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। নবী করিম (সা.) অত্যন্ত কঠোরভাবে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধাচরণ করে সৎ ও যোগ্য ধর্মভীরু লোকদের বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে নিযুক্ত করেছিলেন। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক যাতে সত্যনিষ্ঠ জীবন যাপন করতে পারে, তার পরিপূর্ণ সুযোগ দেওয়া হয়। মহানবী (সা.) আরবের সব ধরনের দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে একটি আদর্শপূর্ণ শান্তিময় সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের নীতি ও নৈতিকতার শিক্ষা উপহার দিয়েছিলেন।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাইকে সক্রিয়ভাবে ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিতে হবে। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ প্রভৃতি রিপু বা কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামকে ‘জিহাদে আকবর’ বা ‘বৃহত্তর জিহাদ’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। তাই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজজীবনের সব ক্ষেত্রে দুর্নীতিবিষয়ক সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, ধর্মীয় উপাসনালয় প্রভৃতি স্থান থেকে প্রাতিষ্ঠানিক সদুপদেশ ও ধর্মীয় বিধিবিধানের আলোকে তৃণমূল পর্যায় থেকে দুর্নীতি দমনের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা তৈরি করে সামাজিক আন্দোলন ও গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ততা ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে। সারা দেশে সাড়ে তিন লাখ মসজিদে প্রতি শুক্রবার সাপ্তাহিক জুমার নামাজের খুতবার মাধ্যমে ইমাম সাহেবরা দুর্নীতিবিরোধী জিহাদি চেতনামূলক বক্তব্য দিয়ে ব্যাপকভাবে জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারেন।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।
dr.munimkhan@yahoo.com
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-04-20/news/251579
দুর্নীতি নামক ঘৃণ্য ব্যাধি শুধু দেশ ও জাতি নয়, দুর্নীতিবাজদেরও অনিবার্য ধ্বংস ডেকে আনে। ঘুষ-দুর্নীতি সমাজের নৈতিকতার ভিত্তি ও মানুষের মানবিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দেয়। দুর্নীতিবাজেরা অবৈধভাবে অন্যের অর্থবিত্ত আত্মসাৎ, লুটপাট ও জবরদখল করলেও যথাযথভাবে সেই সম্পদ ভোগ করতে পারে না। বরং তারা অবৈধ সম্পদের ক্ষমতার দাপটে মানবতা বিধ্বংসী ও নৈতিকতা বিবর্জিত চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, সুদ, ঘুষসহ সামাজিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হয়। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’আলা সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন, ‘জলে-স্থলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি ছড়িয়ে পড়ছে, যার ফলে আল্লাহ তাদের কিছু কিছু কাজের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সূরা আর-রুম, আয়াত-৪১)
ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইসলামের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। দুর্নীতির মূল উৎস ঘুষ ও উৎকোচ গ্রহণ করে দুর্নীতিবাজেরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে জনসাধারণের অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ, প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে অবহেলা এবং স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পাদন করে থাকে। দুর্নীতির প্রভাবে সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব গঠিত ও বিকশিত হতে পারে না। সমাজজীবনে সৎ, যোগ্য ও নীতিবান ধর্মভীরু মানুষ সীমাহীন দুর্নীতির শিকার হয়ে নীরবতা পালনে বাধ্য হয়। এভাবে ঘুষ ও দুর্নীতি সামাজিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত, কলহ-বিবাদ তথা সন্ত্রাস সৃষ্টি করে মানুষের নীতি, আদর্শ ও মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ডেকে আনে। তাই পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’আলা এমন অবৈধ উপায়ে হারাম পন্থায় সম্পদ অর্জন ও ভোগ করা নিষিদ্ধ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইসলামের মূল নীতিমালা ঘোষণা করে বলেছেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনেশুনে অবৈধ পন্থায় আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে বিচারকদের হাতে তুলে দিয়ো না।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৮)
ইসলামে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ন্যায্য পারিশ্রমিকের অতিরিক্ত কোনো উপহার বা উপঢৌকন নিতে নিষেধ করা হয়েছে। কোনো লোভী মানুষকে যখন বেশি পাওয়ার লালসা পেয়ে বসে, তখন সে ধর্ম-কর্ম ভুলে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে অবৈধভাবে অর্থ-সম্পদ অর্জনে উন্মত্ত হয়ে পড়ে। যে সমাজে নীতি-নৈতিকতা, সততা ও যোগ্যতার চেয়ে ধন-সম্পদকে মর্যাদার মাপকাঠি বিবেচনা করা হয়, সেখানেই দুর্নীতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাই সমাজ থেকে সব ধরনের দুর্নীতি দমনের জন্য সর্বপ্রথম মানুষের মধ্যে ইসলামের আদর্শ নৈতিকতার বিকাশ ঘটাতে হবে এবং আল্লাহ ও পরকালের ভয় সদাজাগ্রত করতে হবে। নীতি ও দুর্নীতির ফয়সালা করার জন্য একটি নৈতিক আদর্শের প্রয়োজন।
কোনো কাজের জন্য যাকে মানুষ নিযুক্ত করবে, তাকে যথাযথ পারিশ্রমিক দেওয়া হবে, এর ওপর সে যা কিছু গ্রহণ করবে তা-ই হলো উৎকোচ। প্রাক-ইসলামী যুগে উৎকোচ গ্রহণ করা নিত্যনৈমিত্তিক কাজ ছিল। বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাদের আল্লাহর নিষেধবাণী শুনিয়ে দিলেন। ঘুষ দেওয়া-নেওয়া হচ্ছে দুর্নীতির মূল উৎস বা অন্যতম মাধ্যম। যে সমাজ ও রাষ্ট্রে ঘুষ আদান-প্রদান করা হয়, সে সমাজে কখনো শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুষ-দুর্নীতি উৎখাতের জন্য একে অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ আখ্যা দিয়ে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন, ‘ঘুষ গ্রহীতা ও ঘুষদাতা উভয়ের ওপর আল্লাহর অভিশাপ।’ (বুখারি ও মুসলিম) এদের কঠিন পরিণতি সম্পর্কে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়ই জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে।’ (তাবারানি)
দুর্নীতির অন্যতম শাখা হচ্ছে স্বজনপ্রীতি। এতে সমাজজীবনে অযোগ্য কর্তৃত্ব ও অসৎ নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। দেশের প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো বিনষ্ট হয়। স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির ফলে জাতীয় জীবনে নানা রকম অনাসৃষ্টি ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। নবী করিম (সা.) অত্যন্ত কঠোরভাবে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধাচরণ করে সৎ ও যোগ্য ধর্মভীরু লোকদের বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে নিযুক্ত করেছিলেন। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক যাতে সত্যনিষ্ঠ জীবন যাপন করতে পারে, তার পরিপূর্ণ সুযোগ দেওয়া হয়। মহানবী (সা.) আরবের সব ধরনের দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে একটি আদর্শপূর্ণ শান্তিময় সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের নীতি ও নৈতিকতার শিক্ষা উপহার দিয়েছিলেন।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাইকে সক্রিয়ভাবে ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিতে হবে। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ প্রভৃতি রিপু বা কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামকে ‘জিহাদে আকবর’ বা ‘বৃহত্তর জিহাদ’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। তাই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজজীবনের সব ক্ষেত্রে দুর্নীতিবিষয়ক সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, ধর্মীয় উপাসনালয় প্রভৃতি স্থান থেকে প্রাতিষ্ঠানিক সদুপদেশ ও ধর্মীয় বিধিবিধানের আলোকে তৃণমূল পর্যায় থেকে দুর্নীতি দমনের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা তৈরি করে সামাজিক আন্দোলন ও গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ততা ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে। সারা দেশে সাড়ে তিন লাখ মসজিদে প্রতি শুক্রবার সাপ্তাহিক জুমার নামাজের খুতবার মাধ্যমে ইমাম সাহেবরা দুর্নীতিবিরোধী জিহাদি চেতনামূলক বক্তব্য দিয়ে ব্যাপকভাবে জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারেন।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।
dr.munimkhan@yahoo.com
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-04-20/news/251579
No comments:
Post a Comment