Tuesday, May 8, 2012

শক্তিশালী দুই রাষ্ট্রের প্রভাবশালী নেতারা এ দেশ থেকে নিতেই এসেছিলেন কিছু দিতে আসেননি!


হুবহু : ড. তুহিন মালিক ঢাবির সাবেক ছাত্রনেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজ্ঞ
শক্তিশালী দুই রাষ্ট্রের প্রভাবশালী নেতারা এ দেশ থেকে নিতেই এসেছিলেন কিছু দিতে আসেননি!

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় একই সময়ে ঢাকা সফরে এসেছিলেন। এটিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
শক্তিশালী দুই রাষ্ট্রের প্রভাবশালী নেতারা এ দেশ থেকে নিতেই এসেছিলেন, কিছু দিতে আসেননি। সরকারের শেষ সময়ে তাঁরা যদি না নেয় তাহলে আর কোনো সুযোগ নেই। একজন চাইবেন টিফা চুক্তি কিংবা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা কিংবা সামরিক সহযোগিতা। আরেকজন চাইবেন ট্রানজিট বা ট্রানশিপমেন্ট আদায় করে নিতে। আমরা তো এমনিতেই চতুর্মুখী চাপের মধ্যে আছি। বিরোধী দলের উচিত সরকার নয়, রাষ্ট্রকে সাহায্য করা। সরকারেরও উচিত রাষ্ট্রকে সাহায্য করা। যুদ্ধ না করেও আমরা সমুদ্র বিজয় করেছি। তবে এটি পাওয়ার তুলনায় ১১ হাজার কিলোমিটার কম। বড় বড় চার পাঁচটি ব্লক হারিয়েছি। পৃথিবীর সব দেশের সঙ্গে আমাদের এলসি আছে; কিন্তু পাশের দেশ মিয়ানমারের সঙ্গে নেই।

সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের আপনি কেমন দেখতে চান?
তাঁদের যশ-খ্যাতি বড় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। তাঁরা নিভৃতে জনসেবা দিয়ে যাবেন, এটিই আমি চাই। সামাজিক ও নাগরিক দায়বদ্ধতার মধ্যে তাঁদের থাকতে হবে। যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমরা জ্যামে আটকা পড়ে থাকি, তখন প্রত্যেকের মনে হয় এ দেশে এটি দেখার কেউ কি নেই? এ ছাড়া লাগামহীন লোডশেডিং, মশার কামড়, বর্ষায় হাঁটু পর্যন্ত পানি, এসব দূর করতে পারেননি কেউ। আমি চাই, আগামীর মেয়ররা এসব সমস্যা সমাধান করবেন। তাই আমাদের মতো পেশাজীবীরা মাঠে যত দিন পর্যন্ত না নামবেন, তত দিন কোনো পরিবর্তন আসবে না। এখন চলছে নাককাটা, গালকাটা কাউন্সিলরদের দিয়ে। এমনকি কাউন্সিলর হওয়ার পর অনেকে মারাও যাচ্ছেন। বর্তমান সিটি করপোরেশন শুধু লুটপাটের জায়গা নয়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জায়গা হয়ে গেছে। বর্তমানে ১০০ টাকার কাজে ৬০ টাকা দুর্নীতিতে চলে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা রেঙ্গুনের সঙ্গে বাণিজ্য করেছেন। অথচ ৪০ বছর ধরে সেখানে কোনো বাংলাদেশের ব্যবসা নেই।

ডিসিসি নির্বাচন আবার ঝুলে গেছে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা কতটুকু?
আমি বলব না ইসির কোনো ব্যর্থতা আছে। কারণ ভুলটা গোড়ায়। আমার মনে হয় সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটা ঐকমত্য আছে। বিশেষ করে বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি অলিখিত ঐকমত্য আছে, এক দলের দুর্নীতির বিচার অন্য দল করবে না। করলেও লোক দেখানো করবে। অন্যদিকে রাষ্ট্রের কাঠামোগুলো তারা ধ্বংস করার ব্যাপারে ঐকমত্য আছে। তেমনি ইসিকে কোনো দিন তারা স্বাধীন ও শক্তিশালী করবে না। করলে তাদের ক্ষতি। সুপ্রিম কোর্টের প্রতি সব সময় তারা খৰহস্ত। এমনকি বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারও কিন্তু সুপ্রিম কোর্টকে দলীয়করণ করার চেষ্টা করেছে। দুদককে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখলে পাইকারি হারে দুর্নীতির বিচার শুরু করবে, তাই দুদককেও শক্তিশালী করা হচ্ছে না। পুলিশকে স্বাধীন করলেও যা ইচ্ছা তা করা যাবে না। সিটি করপোরেশন নির্বাচনও এ কাঠামোর বাইরে নয়। যে দলই ক্ষমতায় থাকুক সে দলটি যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত না হবে সে পাস করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচন করতে দেবে না। এটি আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ। সব বিচার-বিশ্লেষণ করে ডিসিসি নির্বাচনটাকে আইনি প্রক্রিয়ায় হত্যা করা হলো। তাই ডিসিসির নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা এখন নেই বললেই চলে। কারণ হাইকোর্টের রিট পিটিশনের কোনো রুল জারি হলে তা নিষ্পত্তি করা বড় ধরনের ঝামেলা। স্বাভাবিক পন্থায় নিষ্পত্তি করতে হলে তিন থেকে চার বছর লাগতে পারে। এটির মূল বিবাদীরই কোনো মাথাব্যথা নেই।

ডিসিসির মেয়র পদে নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। দেশে তো অনেক রাজনীতিক রয়েছেন। আপনি কেন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
আমি প্রচলিত অর্থে রাজনীতিবিদ নই। এটা আমার কাজও না। এ ধরনের কোনো ইচ্ছাও আমার নেই, ছিলও না। কিন্তু স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে যেভাবে দলীয়করণ করা হচ্ছে এবং রাজনৈতিক দলগুলো এটার ওপর নির্ভর করে যেভাবে রাজনীতি চালাচ্ছে, তাতে জনগণের মৌলিক অধিকার ও নাগরিক সেবা গত ৪০ বছরে পাওয়া যায়নি। কারণ বিগত ৪০ বছরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মহাসচিব কিংবা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। নগরের যিনি পার্টি প্রধান তিনি হন মেয়র। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, নিজস্ব খাতের বড় অংশ আসে স্থানীয় সরকারের রাজস্ব থেকে। সিটি করপোরেশনের সম্পদও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সবচেয়ে আপত্তিকর বিষয় হচ্ছে, যেসব রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে কমিশনার বা পদ দিতে পারছেন না, তাঁদের সিটি করপোরেশনের দোকান দিয়ে দিচ্ছেন। কিংবা উন্নয়নের কোনো কাজ দিয়ে দিচ্ছেন। এভাবে সিটি করপোরেশনের হাত-পা ভেঙে গেছে। এটিকে যেভাবে রাষ্ট্রের কেন্দ্র থেকে বাদ দিয়ে শুধু নাগরিক সেবাকেন্দ্রমূলক হওয়ার কথা ছিল সেটি হয়নি। সিটি করপোরেশন ছাড়াও থানা বা ইউনিয়ন পরিষদে মন্ত্রী-এমপিরা কাজ করছেন। এখানে নির্বাচিতদের কোনো ভূমিকাই নেই। এমনকি ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) প্রশাসক দেওয়া হয়েছে। এসবকে রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে। আমাদের সংবিধানের জন্মই হয়েছে এ উদ্দেশ্যে। তাই প্রতীক থেকে শুরু করে সব কিছুই অরাজনৈতিক। সিটি করপোরেশনগুলোতে একজন দক্ষ, সৎ, নির্ভীক সেবক লাগবে। আর এ কারণেই আমি মেয়র প্রার্থী হতে চেয়েছিলাম।

সাক্ষাৎকার গ্রহণে : সফেদ সিরাজ

http://www.kalerkantho.com/index.php?view=details&type=gold&data=Download&pub_no=876&cat_id=3&menu_id=151&news_type_id=1&index=3

No comments:

EID MUBARAK to everybody