জ. ই. মামুনসহ ৯ জনকে ৬ সংগঠন থেকে বহিষ্কারযাযাদি রিপোর্ট
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকা-ের বিচারের দাবিতে সাংবাদিকদের মানববন্ধনে এটিএন বাংলার কর্মীরা হামলা চালিয়েছে। পরে এ ঘটনায় জড়িত থাকায় এটিএন বাংলার ৯ সাংবাদিককে প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটি এবং সাংবাদিক ইউনিয়ন থেকে বহিষ্কার করা হয়। সাগর-রুনি হত্যাকা-ের বিচার ও সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে রোববার পূর্বঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি ছিল। মানববন্ধন শুরুর আগে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সাংবাদিক নেতারা এ ঘটনার জন্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার কয়েকজন সাংবাদিককে দায়ী করেছেন। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রতিবাদে এবং সাগর-রুনি হত্যাকা-ের বিচারের দাবিতে আজ আবারো মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। জানা গেছে, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের নেতা জাহাঙ্গীর আলম প্রধান মানববন্ধন শুরুর আগে বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানকে গ্রেপ্তার এবং তার মালিকানাধীন দুটি চ্যানেলের সাংবাদিকদের মালিকের দোসর আখ্যা দিয়ে বক্তব্য দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সেখানে উপস্থিত এটিএন বাংলার কয়েকজন সাংবাদিক তাকে লাঞ্ছিত করেন। সাংবাদিকরা জানান, জাহাঙ্গীর আলম প্রধানকে টেনেহিঁচড়ে ও কিলঘুষি মারতে মারতে তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে নিয়ে যায়। এ সময় অন্যান্য সাংবাদিক নেতারা তাকে রক্ষা করেন। তখন জাহাঙ্গীর আলম প্রধানের পক্ষে একদল সাংবাদিক লাঠি নিয়ে এটিএন বাংলার সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে যান। এতে প্রেসক্লাবে তুমুল হট্টগোল বাধে। পরে সাংবাদিক নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপর প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে আবারো মানববন্ধন শুরু হয়। দুপুর ২টা পর্যন্ত পালিত হয় মানববন্ধন। সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, অর্থ ও ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে সাগর-রুনি হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেয়া যাবে না। যারা মানববন্ধন কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছেন, তারা খুনিদের পক্ষ অবলম্বন করেছেন। এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজে টক'শোর নামে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কথা হবে, আর তারা চুপ করে থাকবেন, তা হবে না। অবিলম্বে এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজে এ ধরনের টক'শো বন্ধের দাবি জানান তিনি। মানববন্ধন কর্মসূচিতে হামলা প্রসঙ্গে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের সাংবাদিকদের বলব, আপনারা কার পক্ষ অবলম্বন করবেন- সাগর-রুনি? না আপনাদের চেয়ারম্যানের? এ সিদ্ধান্ত আপনাদেরই নিতে হবে। হত্যাকা-ের চার মাসেও তদন্তের কোনো সুরাহা না হওয়ার মধ্যে সমপ্রতি মাহফুজুর রহমান লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে বলেন, সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি পরকীয়ার বলি। তার এ মন্তব্যে সাংবাদিক মহলে নিন্দার ঝড় ওঠে। তাকে গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের দাবি তোলে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো। সাংবাদিকদের দাবির মুখে এটিএন বাংলা কার্যালয়ে গিয়ে একটি সিডি এবং কিছু ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে র্যাব। র্যাব কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মানববন্ধনে ইকবাল সোবহান বলেন, 'এটিএন বাংলার চেয়ারম্যানকে জামাই আদরে কার্যালয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তার ফলাফল জাতিকে জানাতে হবে। তদন্তের নামে সময়ক্ষেপণ করা চলবে না।' ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের অপর অংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, মাহফুজুর রহমান একজন ভালো মানুষ- এই সনদপত্রের জন্য তিনি (মাহফুজুর রহমান) তথাকথিত শিল্পীদের দিয়ে তার টেলিভিশনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। অবস্থাটা এমন যে, ঠাকুর ঘরে কে রে- আমি কলা খাই না। আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার। সাগর-রুনি হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করতে হবে। মাহফুজুর রহমান সাহেব আপনি পার পাবেন না। প্রয়োজনে এটিএন কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের মহাসচিব শওকত মাহমুদ বলেন, 'সাগর-রুনি হত্যা কেবল বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এটিএনের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বলেছেন, তারা পরকীয়া প্রেমের বলি হয়েছেন। এখন যদি মামলার অভিযোগপত্রে পরকীয়া প্রেমের কথা বলা হয়, তাহলে সাংবাদিক সমাজ মেনে নেবে না।' ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন বলেন, 'তথাকথিত শিল্পীদের দিয়ে আমাদের (সাংবাদিক নেতাদের) বিরুদ্ধে মাহফুজুর রহমান তার টেলিভিশনে কথা বলিয়েছেন। প্রয়োজনে আমরা মানহানির মামলা করব।' অন্যদের মধ্যে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, সাবেক মহাসচিব আলতাফ মাহমুদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন দুই অংশের সভাপতি আবদুস শহীদ ও ওমর ফারুক, সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ, মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা প্রধান শাহ আলমগীর, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা এবং বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিম আরা হক মিনু মানববন্ধনে বক্তব্য দেন। ৯ সাংবাদিককে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের মানববন্ধনে হামলার ঘটনায় সাংবাদিকদের চারটি সংগঠন থেকে এটিএন বাংলার ৮ কর্মীসহ ৯ সাংবাদিককে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী জানান, প্রেসক্লাবে চার সংগঠনের নেতারা আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত যারা প্রেসক্লাব, বিএফইউজে, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্য তাদের চিহ্নিত করে নিজ নিজ সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই ৯ সাংবাদিক হলেন- এটিএন বাংলার হেড অব নিউজ জ ই মামুন, প্রধান বার্তা সম্পাদক ভানুরঞ্জন চক্রবর্তী, বিশেষ প্রতিনিধি শওকত মিল্টন, কেরামত উল্লাহ বিপ্লব, মানস ঘোষ, নাদিরা কিরণ, মাহামুদুর রহমান, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এস এম বাবু এবং ভোরের কাগজের প্রতিবেদক শামীম আহমেদ। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, ওই ৯ জনসহ যারাই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল, ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের চিহ্নিত করে যার যার সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত, দাবি এটিএনের রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে অপ্রীতিকর ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন এটিএন বাংলার হেড অব নিউজ জ ই মামুন। সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওরানবাজারে এটিএন বাংলার অফিসে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বার্তা সম্পাদক ভানুরঞ্জন চক্রবর্তী ও বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুনি্ন। লিখিত বক্তব্যে জ ই মামুন বলেন, 'আমি মনে করি জাতীয় প্রেসক্লাবে ঘটে যাওয়া এ ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকা-ের ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে- যা মোটেই কাম্য নয়।' সাংবাদিক নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, 'আপনারা ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখুন কারা আক্রমণকারী, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিন।' তিনি বলেন, 'এটিএন বাংলার সাংবাদিকরা আপনাদের সহকর্মী, কোনোক্রমেই প্রতিপক্ষ নয়- তাই আপনারা এমন কোনো পদক্ষেপ নেবেন না, যাতে এটিএন বাংলার সাংবাদিক, সংবাদকর্মী ও কলাকুশলীসহ সহস্রাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিংবা আমাদের ঐক্যে ফাটল সৃষ্টি করে কোনো সুবিধাবাদী মহল ফায়দা আদায় করতে পারে। সাগর-রুনি হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচারের দাবি আদায়ের স্বার্থেও আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের বিভেদ বা ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হওয়া উচিত নয় বলে আমরা মনে করি।' মানববন্ধনে মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়া ওই সাংবাদিকের ওপর এটিএনের সাংবাদিকদের প্রথমে এভাবে তেড়ে যাওয়া ঠিক হয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান জ ই মামুন। তিনি বলেন, 'আমাদের লোকজন শুধু ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করতে গিয়েছে যে, এটিএন বাংলা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি সাংবাদিক নেতারা দিয়েছেন কি না।' শুরুতে ওই সাংবাদিককে এটিএনের কর্মীরা চারদিক থেকে ঘিরে ধরা ঠিক হয়েছে কি না- আবারো এমন প্রশ্নের জবাবে জ ই মামুন বলেন, 'এটি যেমন ঠিক হয়নি, তেমনি কাউকে 'খুনি' বলা কিংবা এটিএন বাংলা ঘেরাওয়ের আহ্বান জানানোও ঠিক হয়েছে কি?' সাংবাদিকদের প্রতি পাল্টা প্রশ্ন রাখেন তিনি। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবিতে সাংবাদিক সংগঠনের কর্মসূচিতে একজন সাংবাদিক নেতার ওপর হামলার ঘটনার ভিডিও চিত্র পুরোটা দেখাননি জ ই মামুন। http://www.jjdin.com/index.php?view=details&feature=yes&type=single&pub_no=168&cat_id=3&menu_id=13&news_type_id=1&index=1
এটিএন বাংলার সাংবাদিক-কর্মীরা হামলা চালায়। |
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকা-ের বিচারের দাবিতে সাংবাদিকদের মানববন্ধনে এটিএন বাংলার কর্মীরা হামলা চালিয়েছে। পরে এ ঘটনায় জড়িত থাকায় এটিএন বাংলার ৯ সাংবাদিককে প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটি এবং সাংবাদিক ইউনিয়ন থেকে বহিষ্কার করা হয়। সাগর-রুনি হত্যাকা-ের বিচার ও সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে রোববার পূর্বঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি ছিল। মানববন্ধন শুরুর আগে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সাংবাদিক নেতারা এ ঘটনার জন্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার কয়েকজন সাংবাদিককে দায়ী করেছেন। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রতিবাদে এবং সাগর-রুনি হত্যাকা-ের বিচারের দাবিতে আজ আবারো মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। জানা গেছে, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের নেতা জাহাঙ্গীর আলম প্রধান মানববন্ধন শুরুর আগে বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানকে গ্রেপ্তার এবং তার মালিকানাধীন দুটি চ্যানেলের সাংবাদিকদের মালিকের দোসর আখ্যা দিয়ে বক্তব্য দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সেখানে উপস্থিত এটিএন বাংলার কয়েকজন সাংবাদিক তাকে লাঞ্ছিত করেন। সাংবাদিকরা জানান, জাহাঙ্গীর আলম প্রধানকে টেনেহিঁচড়ে ও কিলঘুষি মারতে মারতে তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে নিয়ে যায়। এ সময় অন্যান্য সাংবাদিক নেতারা তাকে রক্ষা করেন। তখন জাহাঙ্গীর আলম প্রধানের পক্ষে একদল সাংবাদিক লাঠি নিয়ে এটিএন বাংলার সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে যান। এতে প্রেসক্লাবে তুমুল হট্টগোল বাধে। পরে সাংবাদিক নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপর প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে আবারো মানববন্ধন শুরু হয়। দুপুর ২টা পর্যন্ত পালিত হয় মানববন্ধন। সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, অর্থ ও ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে সাগর-রুনি হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেয়া যাবে না। যারা মানববন্ধন কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছেন, তারা খুনিদের পক্ষ অবলম্বন করেছেন। এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজে টক'শোর নামে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কথা হবে, আর তারা চুপ করে থাকবেন, তা হবে না। অবিলম্বে এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজে এ ধরনের টক'শো বন্ধের দাবি জানান তিনি। মানববন্ধন কর্মসূচিতে হামলা প্রসঙ্গে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের সাংবাদিকদের বলব, আপনারা কার পক্ষ অবলম্বন করবেন- সাগর-রুনি? না আপনাদের চেয়ারম্যানের? এ সিদ্ধান্ত আপনাদেরই নিতে হবে। হত্যাকা-ের চার মাসেও তদন্তের কোনো সুরাহা না হওয়ার মধ্যে সমপ্রতি মাহফুজুর রহমান লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে বলেন, সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি পরকীয়ার বলি। তার এ মন্তব্যে সাংবাদিক মহলে নিন্দার ঝড় ওঠে। তাকে গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের দাবি তোলে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো। সাংবাদিকদের দাবির মুখে এটিএন বাংলা কার্যালয়ে গিয়ে একটি সিডি এবং কিছু ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে র্যাব। র্যাব কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মানববন্ধনে ইকবাল সোবহান বলেন, 'এটিএন বাংলার চেয়ারম্যানকে জামাই আদরে কার্যালয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তার ফলাফল জাতিকে জানাতে হবে। তদন্তের নামে সময়ক্ষেপণ করা চলবে না।' ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের অপর অংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, মাহফুজুর রহমান একজন ভালো মানুষ- এই সনদপত্রের জন্য তিনি (মাহফুজুর রহমান) তথাকথিত শিল্পীদের দিয়ে তার টেলিভিশনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। অবস্থাটা এমন যে, ঠাকুর ঘরে কে রে- আমি কলা খাই না। আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার। সাগর-রুনি হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করতে হবে। মাহফুজুর রহমান সাহেব আপনি পার পাবেন না। প্রয়োজনে এটিএন কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের মহাসচিব শওকত মাহমুদ বলেন, 'সাগর-রুনি হত্যা কেবল বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এটিএনের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বলেছেন, তারা পরকীয়া প্রেমের বলি হয়েছেন। এখন যদি মামলার অভিযোগপত্রে পরকীয়া প্রেমের কথা বলা হয়, তাহলে সাংবাদিক সমাজ মেনে নেবে না।' ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন বলেন, 'তথাকথিত শিল্পীদের দিয়ে আমাদের (সাংবাদিক নেতাদের) বিরুদ্ধে মাহফুজুর রহমান তার টেলিভিশনে কথা বলিয়েছেন। প্রয়োজনে আমরা মানহানির মামলা করব।' অন্যদের মধ্যে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, সাবেক মহাসচিব আলতাফ মাহমুদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন দুই অংশের সভাপতি আবদুস শহীদ ও ওমর ফারুক, সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ, মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা প্রধান শাহ আলমগীর, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা এবং বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিম আরা হক মিনু মানববন্ধনে বক্তব্য দেন। ৯ সাংবাদিককে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের মানববন্ধনে হামলার ঘটনায় সাংবাদিকদের চারটি সংগঠন থেকে এটিএন বাংলার ৮ কর্মীসহ ৯ সাংবাদিককে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী জানান, প্রেসক্লাবে চার সংগঠনের নেতারা আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত যারা প্রেসক্লাব, বিএফইউজে, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্য তাদের চিহ্নিত করে নিজ নিজ সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই ৯ সাংবাদিক হলেন- এটিএন বাংলার হেড অব নিউজ জ ই মামুন, প্রধান বার্তা সম্পাদক ভানুরঞ্জন চক্রবর্তী, বিশেষ প্রতিনিধি শওকত মিল্টন, কেরামত উল্লাহ বিপ্লব, মানস ঘোষ, নাদিরা কিরণ, মাহামুদুর রহমান, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এস এম বাবু এবং ভোরের কাগজের প্রতিবেদক শামীম আহমেদ। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, ওই ৯ জনসহ যারাই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল, ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের চিহ্নিত করে যার যার সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত, দাবি এটিএনের রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে অপ্রীতিকর ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন এটিএন বাংলার হেড অব নিউজ জ ই মামুন। সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওরানবাজারে এটিএন বাংলার অফিসে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বার্তা সম্পাদক ভানুরঞ্জন চক্রবর্তী ও বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুনি্ন। লিখিত বক্তব্যে জ ই মামুন বলেন, 'আমি মনে করি জাতীয় প্রেসক্লাবে ঘটে যাওয়া এ ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকা-ের ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে- যা মোটেই কাম্য নয়।' সাংবাদিক নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, 'আপনারা ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখুন কারা আক্রমণকারী, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিন।' তিনি বলেন, 'এটিএন বাংলার সাংবাদিকরা আপনাদের সহকর্মী, কোনোক্রমেই প্রতিপক্ষ নয়- তাই আপনারা এমন কোনো পদক্ষেপ নেবেন না, যাতে এটিএন বাংলার সাংবাদিক, সংবাদকর্মী ও কলাকুশলীসহ সহস্রাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিংবা আমাদের ঐক্যে ফাটল সৃষ্টি করে কোনো সুবিধাবাদী মহল ফায়দা আদায় করতে পারে। সাগর-রুনি হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচারের দাবি আদায়ের স্বার্থেও আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের বিভেদ বা ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হওয়া উচিত নয় বলে আমরা মনে করি।' মানববন্ধনে মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়া ওই সাংবাদিকের ওপর এটিএনের সাংবাদিকদের প্রথমে এভাবে তেড়ে যাওয়া ঠিক হয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান জ ই মামুন। তিনি বলেন, 'আমাদের লোকজন শুধু ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করতে গিয়েছে যে, এটিএন বাংলা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি সাংবাদিক নেতারা দিয়েছেন কি না।' শুরুতে ওই সাংবাদিককে এটিএনের কর্মীরা চারদিক থেকে ঘিরে ধরা ঠিক হয়েছে কি না- আবারো এমন প্রশ্নের জবাবে জ ই মামুন বলেন, 'এটি যেমন ঠিক হয়নি, তেমনি কাউকে 'খুনি' বলা কিংবা এটিএন বাংলা ঘেরাওয়ের আহ্বান জানানোও ঠিক হয়েছে কি?' সাংবাদিকদের প্রতি পাল্টা প্রশ্ন রাখেন তিনি। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবিতে সাংবাদিক সংগঠনের কর্মসূচিতে একজন সাংবাদিক নেতার ওপর হামলার ঘটনার ভিডিও চিত্র পুরোটা দেখাননি জ ই মামুন। http://www.jjdin.com/index.php?view=details&feature=yes&type=single&pub_no=168&cat_id=3&menu_id=13&news_type_id=1&index=1