Sunday, January 12, 2014

পবিত্র কোরআনের আলো - নির্বোধ ইহুদিরাই হজরত সোলায়মান (আ.)কে জাদুকর আখ্যায়িত করেছিল

১০২। তারা ওই শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সোলায়মানের রাজত্বকালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সোলায়মান কুফর করেননি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত- দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়েই এ কথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না। অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যা দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তদ্দ্বারা কারো অনিষ্ট করতে পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শেখে। তারা ভালোরূপে জানে যে যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোনো অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্মবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ- যদি তারা জানত।
১০৩। যদি তারা ইমান আনত এবং আল্লাহভীরু হতো, তবে আল্লাহর কাছ থেকে উত্তম প্রতিদান পেত। যদি তারা জানত।
তাফসির : (ইহুদিরা এমন নির্বোধ যে) তারা (আল্লাহ প্রদত্ত কিতাবের অনুসরণ না করে) ওই শাস্ত্রের (অর্থাৎ জাদুর) অনুসরণ করল, যা সোলায়মানের রাজত্বকালে শয়তানরা চর্চা করত। (কতক নির্বোধ হজরত সোলায়মানকে জাদুকর মনে করত। তাদের এ ধারণা একেবারেই ভিত্তিহীন। কারণ, জাদু বিশ্বাসগতভাবে অথবা কার্যগতভাবে কুফর) সোলায়মান (কখনো) কুফর করেননি। হ্যাঁ, শয়তানরা (অর্থাৎ দুষ্ট জিনরা অবশ্য) কুফর (অর্থাৎ জাদু) করত। (নিজেরা তো করতই) তারা (অপরাপর) মানুষকেও জাদু শিক্ষা দিত। (সে জাদুই বংশপরম্পরায় প্রচলিত রয়েছে এবং ইহুদিরা তা-ই শিক্ষা করে। এমনিভাবে তারা ওই জাদুও অনুসরণ করে, যা বাবেল শহরে হারুত ও মারুত- দুই ফেরেশতার প্রতি (বিশেষ উদ্দেশে) অবতীর্ণ হয়েছিল। তারা উভয়ে (সে জাদু) কাউকে শিক্ষা দিত না, যতক্ষণ না (সাবধান করে আগেই) বলে দিত যে আমাদের অস্তিত্ব ও মানুষের জন্য খোদায়ী পরীক্ষা (যে, কে আমাদের কাছ থেকে এ জাদু শিক্ষা করে বিপদে জড়িয়ে পড়ে, আর কে তা থেকে বেঁচে থাকে)। কাজেই তুমি (এ কথা জেনেও) কাফির হয়ো না (তাহলে বিপদে জড়িয়ে পড়বে)। অতঃপর তারা (কিছু লোক) তাদের (ফেরেশতাদ্বয়ের) কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যদ্দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিত। (এতে কারো এরূপ ধারণার বশবর্তী হয়ে ভীত হওয়া উচিত নয় যে জাদুকররা যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারে। কেননা, এটা নিশ্চিত যে) তারা আল্লাহর (ভাগ্য সম্পর্কিত) আদেশ ছাড়া তদ্দ্বারা কারো (বিন্দু পরিমাণও) অনিষ্ট করতে পারত না। তারা (এহেন জাদু আয়ত্ত করে) যা তাদের ক্ষতি করে এবং যথার্থ উপকার করে না (সুতরাং জাদু অনুসরণ করে ইহুদিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে)। আর এটা শুধু আমারই কথা নয়; বরং তারা ভালোরূপে জানে, যে লোক আল্লাহর গ্রন্থের বিনিময়ে জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোনো অংশ অবশিষ্ট নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্মবিক্রয় করেছে (অর্থাৎ জাদু ও কুফর), তা খুবই মন্দ। যদি তারা কুফর ও দুষ্কর্মের পরিবর্তে ইমান আনত এবং আল্লাহভীরু হতো, তবে আল্লাহর কাছ থেকে (কুফর ও দুষ্কর্মের চেয়ে হাজার গুণ) উত্তম প্রতিদান পেত। যদি তারা বুঝত।
আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয় : উলি্লখিত আয়াতসমূহের তাফসির ও শানেনুজুল প্রসঙ্গে অনেক ইসরাইলি রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়। সে রেওয়ায়েত পাঠ করে অনেক পাঠকের মনে নানা প্রশ্ন দেখা যায়। হাকীমুল উম্মত মওলানা আশরাফ আলী থানবী (র.) সুস্পষ্ট এবং সহজ ভঙ্গিতে এসব প্রশ্নের উত্তর দান করেছেন। নিচে তার কয়েকটি উদ্ধৃত করা হলো : ১. নির্বোধ ইহুদিরাই হজরত সোলায়মান (আ.)কে জাদুকর বলে আখ্যায়িত করত। তাই আল্লাহ তায়ালা আয়াতের মাঝখানে তাঁর নিষ্কলুষতাও প্রকাশ করে দিয়েছেন। ২. বর্ণিত আয়াতসমূহে ইহুদিদের নিন্দা করাই উদ্দেশ্য। কারণ, তাদের মধ্যে জাদুবিদ্যার চর্চা ছিল। ৩. সবকিছু জানা সত্ত্বেও ইহুদিরা আমল বা কাজ করত, 'ইলম' বা জানার বিপরীত এবং এ ব্যাপারে তারা মোটেও বিচক্ষণতার পরিচয় দিত না। ৪. ঠিক কখন, সে সম্পর্কে সুনিশ্চিত তথ্য জানা না থাকলেও একসময় পৃথিবীতে বিশেষ করে বাবেল শহরে জাদুবিদ্যার যথেষ্ট প্রচলন ছিল।
তাফসিরে মা'রেফুল কোরআন অবলম্বনে।
http://www.kalerkantho.com/print-edition/muktadhara/2014/01/13/40844

No comments:

EID MUBARAK to everybody