Sunday, November 29, 2015

642 Tiny Things to Write About










 https://www.youtube.com/watch?v=_HTQdCglXKI


 http://shop.coolmaterial.com/products/the-every-occasion-card-8pk


 http://www.wordnotebooks.com/collections/accessories

http://www.chroniclebooks.com/blog/2015/11/10/discover-the-inspiration-behind-the-oprah-approved-letters-to-my-series/

http://www.leafcutterdesigns.com/shop/letters-to-my-future-self.html

http://www.chroniclebooks.com/titles/712-more-things-to-write-about.html

http://coolmaterial.com/work/word-notebooks-limited-edition-bandana/

Sunday, November 22, 2015

বিষাদ-সিন্ধুর ইংরেজি অনুবাদ

ফকরুল আলম | আপডেট: | প্রিন্ট সংস্করণ

পারস্য ও আরব গ্রন্থ হইতে মূল ঘটনার সারাংশ লইয়া বিষাদ-সিন্ধু বিরচিত হইল। প্রাচীন কাব্য-গ্রন্থের অবিকল অনুবাদ করিয়া প্রাচীন কবিগণের রচনাকৌশল এবং শাস্ত্রের মর্যাদা রক্ষÿা করা অত্য¯ন্ত দুরূহ। মাদৃশ লোকের পেÿক্ষ তদ্বিষয়ের যথার্থ গৌরব রক্ষার আকাঙ্ক্ষা “বামনের বিধু-ধারণের আকাঙ্ক্ষা




বিষাদ-সিন্ধু বাঙালি মুসলমানের লেখা প্রথম চিরায়ত উপন্যাস। প্রসাদগুণেও এ উপন্যাস অনন্য। বইটি অচিরেই বেরোচ্ছে ইংরেজি অনুবাদে। এর রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেনের জন্মমাসে উপন্যাসটি অনুবাদের অভিজ্ঞতা লিখেছেন এর অনুবাদক
মীর মশাররফ হোসেন (১৩ নভেম্বর ১৮৪৭-১৯১২), প্রতিকৃতি: মাসুক হেলালযত দূর মনে পড়ে, মীর মশাররফ হোসেনের ধ্রুপদি উপন্যাস বিষাদ-সিন্ধু পড়েছিলাম ছেলেবেলায়। তবে তা ছিল সংক্ষেপিত সংস্করণ। পুরো উপন্যাসটি পড়েছি আরও পরে, একেবারে পরিণত বয়সে—সে-ও অনুবাদ করার সূত্রে। বছর দুয়েক আগের কথা। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বিষাদ-সিন্ধু উপন্যাসটি ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করতে বললেন আমাকে। তাঁর কথায় রাজিও হয়ে গেলাম। এরপর প্রথমেই পড়তে শুরু করলাম গোটা উপন্যাস। এখানে বলে রাখা ভালো, বাংলা ভাষায় বিষাদ-সিন্ধুর বেশ কয়েকটি সংস্করণ রয়েছে, তবে ইংরেজি অনুবাদের ক্ষেত্রে বাংলা মূল গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছি আবুল আহসান চৌধুরী সম্পাদিত সংস্করণটি। কারণ, বিষাদ-সিন্ধুর অনেকগুলো সংস্করণের মধ্যে এটিকে আমার স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে হয়েছে। যা হোক, উপন্যাস পড়া শেষে মনে হলো, আমার জন্য এটি অনুবাদ করা বামন হয়ে চাঁদে হাত দেওয়ার মতো ব্যাপার হবে। প্রসঙ্গত বিষাদ-সিন্ধুতে প্রায় এভাবেই লিখেছিলেন মীর মশাররফ হোসেন: ‘পারস্য ও আরব গ্রন্থ হইতে মূল ঘটনার সারাংশ লইয়া বিষাদ-সিন্ধু বিরচিত হইল। প্রাচীন কাব্য-গ্রন্থের অবিকল অনুবাদ করিয়া প্রাচীন কবিগণের রচনাকৌশল এবং শাস্ত্রের মর্যাদা রক্ষÿা করা অত্য¯ন্ত দুরূহ। মাদৃশ লোকের পেÿক্ষ তদ্বিষয়ের যথার্থ গৌরব রক্ষার আকাঙ্ক্ষা “বামনের বিধু-ধারণের আকাঙ্ক্ষা” বলিতে হইবে। তবে মহর্রমের মূল ঘটনাটি বঙ্গভাষাপ্রিয়-প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণের সহজে হৃদয়ঙ্গম করাইয়া দেওয়াই আমার একমাত্র মুখ্য উদ্দেশ্য।’ কিন্তু আজ এত বছর পর আমি এখানে আবার কেন লিখছি বামন ও চাঁদের প্রসঙ্গ, তার পুরো অর্থ আমার অনুবাদ-অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যা করলে পাঠকদের কাছে স্পষ্ট হবে হয়তো।
উপন্যাসের মূল গল্পটি তো সবার জানা, থিমগুলোও পাঠকদের কাছে স্পষ্ট। তাই অনুবাদের শুরুতে প্রথমেই বোঝার চেষ্টা করলাম, ঔপন্যাসিক হিসেবে মীর মশাররফ হোসেন কী কী কৌশল প্রয়োগ করেছেন এখানে। দেখলাম, লেখক হিসেবে তিনি সচেতনভাবে অনেক কৌশল ব্যবহার করেছেন। পুরো আখ্যানের নানান ভাগ আছে। একদিকে এটি মহাকাব্যিক উপন্যাস, অন্যদিকে খানিকটা আঞ্চলিকও। আবার সর্বোপরি এটি একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস। উপন্যাসজুড়ে একের পর এক যেমন নাটকীয় মুহূর্তে আছে, তেমনি এর কোনো কোনো জায়গা খুব বেশি কাব্যময়। ইংরেজি অনুবাদে সেই নাটকীয়তা ও কাব্যময়তা যাতে বজায় থাকে, সে বিষয়ে আমি সব সময় সচেতন ছিলাম। তবে কাজটি করতে গিয়ে কতটুকু মান বজায় রাখতে পেরেছি, তা হয়তো সময়ান্তরে বোঝা যাবে। এককথায়, আলোচ্য উপাখ্যানে মীর মশাররফ হোসেন একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্থির ছিলেন না; উপরন্তু একের ভেতর অনেক কিছুর সমন্বয় ঘটিয়েছেন। ফলে অনুবাদ করতে গিয়ে প্রথমত এ বিষয়গুলো বুঝতে হয়েছে আমাকে এবং অনুবাদের সময় আমিও সচেতনভাবে ঔপন্যাসিকের মূল উদ্দেশ্যের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছি।
এবার বলা যাক ঔপন্যাসিকের মহাকাব্যিক ভাষার কথা। বিষাদ-সিন্ধুতে মীর মশাররফ হোসেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ভাষাশৈলী নির্মাণ করেছেন। ভাষার কাব্যময়তাকে বজায় রেখেছেন আগাগোড়া। অনুবাদক হিসেবে লেখকের এই সচেতনতাকে শ্রদ্ধা না দেখিয়ে উপায় নেই। স্বীকার করছি, শব্দের ব্যঞ্জনা বোঝাতে আমাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। যেহেতু এটি উনিশ শতকের একটি ধ্রুপদি উপন্যাস, একই সঙ্গে এখানে রয়েছে মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি এবং অনেক দুর্বোধ্য, অপ্রচলিত শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে পাণ্ডুলিপিতে; ফলে উপন্যাসের মূল সুর অক্ষুণ্ন রাখতে গিয়ে বারবার অভিধানের সাহায্য নিতে হয়েছে আমাকে। এ ছাড়া লেখকের বাক্যগঠন-সংক্রান্ত ব্যাপারগুলোর প্রতিও নজর দিতে হয়েছে। যদিও ধর্মীয় ও অপ্রচলিত শব্দের ব্যবহার অনুবাদের সময় কিছুটা কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, কিছু কিছু জায়গায় কোনো কোনো বাক্য আছে দশ-পনেরো লাইন পর্যন্ত দীর্ঘ; এ ক্ষেত্রে ইংরেজি অনুবাদে দীর্ঘ বাক্যগুলোকে না ভেঙে হুবহু রাখার চেষ্টা করেছি। কেননা এতে বস্তুনিষ্ঠতা রক্ষা হয়। এভাবে নানা দিক ভেবেচিন্তে সম্পন্ন করেছি অনুবাদ।
কখনো কখনো মনে হয়েছে, এটি অনুবাদ করার জন্য এত পরিশ্রমের কী দরকার? পরক্ষণেই আবার মীর মশাররফ হোসেনের শক্তিমত্তার প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছি। কারণ, বিষাদ-সিন্ধুর সুনিপুণ কৌশল আমাকে মুগ্ধ করেছে। একদিকে এখানে আছে ব্যক্তিগত জীবনের গল্প, অন্যদিকে সমাজের সামগ্রিক বিষয়ের বয়ান। কৌশলগত দিক চিন্তা করলে স্পষ্টই বোঝা যায়, ‘এপিক’ বা মহাকাব্যের গঠনশৈলী সম্পর্কে মীর মশাররফের পঠনপাঠন কতটা বিস্তৃত ছিল। হ্যাঁ, এ লেখায় ঘুরেফিরে বারবার উপন্যাসটির গঠনকৌশলের কথা বলতে হচ্ছে। যেমন, কোনো কোনো জায়গায় কাউকে সম্বোধন করে একটি বিশেষ অংশ লেখা হয়েছে, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘আপোস্ট্রফি’; আবার উপন্যাসের শেষ দিকে কিছু অনুতাপ বা অনুশোচনার অংশও আছে, ইংরেজি ভাষায় একে বলে ‘লেমেন্ট’। এসব বিষয় অনুধাবনে আমাকে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। কারণ আমি বহুবছর ধরে সাহিত্য-অধ্যাপনায় নিয়োজিত; ফলে ‘এপিক’ পড়তে গিয়ে উপর্যুক্ত বিষয়গুলো নিজে যেমন পড়েছি, পড়িয়েছি ছাত্রছাত্রীদেরও।
অনুবাদের অভিজ্ঞতা লিখতে বসে এ কথাও বলা জরুরি, কাজটি করতে করতে মনে হয়েছে, মীর মশাররফ প্রথমত যে উদ্দেশ্য নিয়ে বিষাদ-সিন্ধু লেখা শুরু করেছিলেন, শেষ অবধি তাতে আর অনড় থাকেননি, বরং লিখতে লিখতে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছেন এবং হেঁটেছেন সেই নতুন পথ ধরে। ফলে উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহে বিচিত্রতা বিদ্যমান।
এমন একটি বৈচিত্র্যময় বই অনুবাদ করতে পেরে শেষাবধি ভালো লেগেছে এ জন্য যে এই উপন্যাস কেবল কারবালার ঘটনা নয়, নিছক ইমাম হাসান-ইমাম হোসেনের গতানুগতিক কাহিনিও নয়; এটি উনিশ শতকের একটি বিখ্যাত ধ্রুপদি গ্রন্থ, যেখানে একটি ঐতিহাসিক ঘটনার আলোকে উনিশ শতকের সমাজব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়-আশয় স্থান পেয়েছে। যেমন, উপন্যাসের এক জায়গায় শোষক শ্রেণির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার মতো ঘটনা চোখে পড়ে। সহজ করে বললে, উপনিবেশবিরোধী চেতনা এখানে বিষাদ-সিন্ধুকে একটি অন্যতর মাত্রা দিয়েছে।
.মীর মশাররফ প্রথমত যে উদ্দেশ্য নিয়ে বিষাদ-সিন্ধু লেখা শুরু করেছিলেন, শেষ অবধি তাতে আর অনড় থাকেননি
বিষাদ-সিন্ধু পড়তে গেলে দেখা যাবে, ঔপন্যাসিক সচেতনভাবে অনেক স্থানে এমন ভাষা ব্যবহার করেছেন, যা মুসলমান সম্প্রদায়ের বাইরে সব ধর্মের মানুষের জন্য প্রযোজ্য। আরেকটি কথা, বর্তমান অনুবাদে কিছু ইংরেজি শব্দ পাঠকের কাছে হয়তো খানিকটা দুর্বোধ্য মনে হতে পারে। উপন্যাসের কাব্যিক ব্যঞ্জনা অক্ষুণ্ন রাখতে সচেতনভাবেই আমি অনুবাদে ধ্রুপদি শব্দের ব্যবহার করেছি, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘ইলেভেটেড ডিকশান’। অন্যদিকে অনুবাদ করতে করতে উপন্যাসের একটি জায়গার সঙ্গে খুঁজে পেয়েছি হোমারের ইলিয়াড-এর সাযুজ্য। ইলিয়াড-এ যেমন দেবতাদের একটি একচ্ছত্র কর্তৃত্বের ব্যাপার আছে, বিভিন্ন চরিত্রকে তাঁরা নানাভাবে সাহায্য করেন, একইভাবে বিষাদ-সিন্ধুতেও দেবদূতগণ চরিত্রের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নির্ধারণ করে দেন।
প্রথমেই বলেছি, উপন্যাসের অনুবাদটি ছিল ভীষণ শ্রমসাধ্য একটি ব্যাপার। কাজটি শেষ করে অনেকবার ভেবেছি, অনুবাদ না করলে এ বইয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়তো আমার অজানাই থাকত। কারণ, একজন অনুবাদকের দৃষ্টিতে এ বই পড়ার ফলে এর যতগুলো দিক আমার সামনে উন্মোচিত হয়েছে, নিছক পাঠকের দৃষ্টিতে পড়লে হয়তো সেটি হতো না—এখন কথাটি বেশ জোর দিয়েই বলতে পারি। এ প্রসঙ্গে আরেকটু যোগ করি, অনুবাদ মানে তো কেবল শব্দের অনুবাদ নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দৃষ্টিভঙ্গি, স্বরভঙ্গি, মনোভঙ্গি ইত্যাদি বিস্তর বিষয়। মূলত কৌশলগত দিক ঠিক রেখে বিষাদ-সিন্ধুর মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ উপন্যাস অনুবাদ করা সত্যিই দুরূহ। এটুকু বলতে পারি, আমি সেই কঠিন কাজটি নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পন্ন করতে চেষ্টা করেছি।
ইংরেজি অনুবাদের ক্ষেত্রে পাঠকের সুবিধা-অসুবিধার কথাও মাথায় ছিল আমার। বিষাদ-সিন্ধুর মূল অনুবাদ শেষ করার পর ভেবেছি গ্রন্থশেষে একটি শব্দ-নির্ঘণ্ট দেব, তবে কোনোভাবেই সেটি আকারে বড় হবে না। অনেক ক্ষেত্রে বেশি বড় হলে অজানা শব্দ জানতে গিয়ে পাঠক কেবল নির্ঘণ্টে চোখ বুলান। ফলে মূল পাণ্ডুলিপি থেকে মনোযোগ বিচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আমি চেষ্টা করেছি ‘পেঙ্গুইন’ থেকে প্রকাশিত ধ্রুপদি বইগুলোর আদলে মূল পাণ্ডুলিপির মধ্যেই অপেক্ষাকৃত অপ্রচলিত বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা জুড়ে দিতে। আশা করি, এতে পাঠক অনেকাংশে নির্ভার বোধ করবেন। এর বাইরে প্রয়োজনবোধে অতিরিক্ত টীকা বা বিশ্লেষণ যুক্ত করার সুযোগ তো এখনো রয়েছেই।
অনুবাদ করতে গিয়ে বারবার মনে উঁকি দিয়েছে একটি প্রশ্ন—উনিশ শতকের একটি বই এই সময়ের পাঠেকর জন্য কতটা প্রাসঙ্গিক? পরে প্রশ্নের পিষ্ঠে পেয়েছি উত্তরও—কেবল ধর্মীয় নয়, সামাজ-সংস্কৃতির নানা দিক থেকেও বিষাদ-সিন্ধু প্রাসঙ্গিক ও চিরায়ত। উপন্যাসে শোষকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার ইঙ্গিত আছে, রয়েছে লেখকের স্বাধীনতার কথা এবং তথাকথিত সমাজের খোলস বদলের আভাস। এই প্রসঙ্গগুলো এখনো সমানভাবে উচ্চারিত আমাদের সমাজে।
আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, বিষাদ-সিন্ধুর অনুবাদ আমি কেন করলাম? বলব, কাজটি করেছি নিজের দায়িত্ববোধ থেকে। কেননা, এই অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বপাঠক পরিচিত হবেন বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ একটি ধ্রুপদি গ্রন্থের সঙ্গে। সর্বোপরি পুরো অনুবাদের কাজ চলাকালে এ উপন্যাসের প্রাসঙ্গিতা আমি নানাভাবে উপলব্ধি করেছি। উনিশ ও বিশ শতকজুড়ে বাংলা সাহিত্যে এমন একটি মহাকাব্যিক উপন্যাস বিরল। এসব নানান বিবেচনায় বইটিকে আমার যেমন উল্লেখযোগ্য মনে হয়েছে, তেমনি বাংলা সাহিত্যে উনিশ শতকের গুরুত্ব অনুধাবনে অন্য ভাষার পাঠককেও ইংরেজি অনুবাদটি সাহায্য করবে—আমার বিশ্বাস এমনই।
এই ইংরেজি অনুবাদ অচিরেই বই আকারে বের হবে বাংলা একাডেমি থেকে। এ ছাড়া দিল্লিভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থা ‘সোশ্যাল সায়েন্স একাডেমি’ও এটি প্রকাশে সবিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছে। আশা করছি, দ্রুততম সময়ে তারাও ইংরেজি সংস্করণটি বাজারে আনবে। আর এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পাঠকমহলে পৌঁছে যাবে বাংলা সাহিত্যের ধ্রুপদি গ্রন্থ বিষাদ-সিন্ধু—এই আশা বুকে বেঁধে রাখি।

http://www.prothom-alo.com/art-and-literature/article/688432/
 

Sunday, October 11, 2015

নতুন বই

নতুন বই 

বায়োডাটা

রেজাউদ্দিন স্টালিন বর্তমান বাংলা কবিতার গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর। তার পুরাণমনস্ক ইতিহাসচেতনা আমাদের ভৌগোলিক সীমারেখাকে বিস্তৃত করে দেয়। এবারের একুশে বইমেলায় তার ৯টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে 'বায়োডাটা' প্রকাশ করেছে কুঁড়েঘর প্রকাশনী। গ্রন্থের ৭২টি কবিতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কবিতা বায়োডাটা, নিসিদ্ধ সংখ্যা, সময়ের গল্প, এক মৃত ব্যক্তির সাক্ষাৎকার ইত্যাদি। করপোরেট সংস্কৃতিতে বায়োডাটানির্ভর মানবজীবনের বিরুদ্ধে তিনি দ্রোহের বাণী উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, আমার আলাদা কোনো বায়োডাটা নেই/জন্মেছি মানুষ হিসেবে এই আমার বায়োডাটা। বর্তমান বিশ্বপরিপ্রেক্ষিত এবং সমাজ বাস্তবতায় রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতা এক দায়বদ্ধ শিল্পের ইতিহাস। এই অস্থির সময়ের বিরুদ্ধে রেজাউদ্দিন স্টালিন অমোঘ উচ্চারণ আমাদের সচকিত করে। গবেষক লেখক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতা সম্পর্কে বলেন_

'রেজাউদ্দিন স্টালিনের জগৎটা আমাদের পরিচিত তার সীমানাটা আমরা জানি। কিন্তু ওই সীমানাটা এই কবি মানে না। নিজের শক্তিতে তাকে সে প্রসারিত করে নেয়। এবং একই সঙ্গে গভীরতাও সৃষ্টি করে। দেখার দৃষ্টি, অনুভবের শক্তি, কল্পনার ক্ষমতা, ভাবনার বৈশিষ্ট্য এবং উপস্থাপনার অনুশীলিত দক্ষতায় পরিচিত বিষয়গুলো নতুন হয়ে ওঠে। ওর কবিতায় স্থান আছে, রয়েছে বৃষ্টিভরা আকাশ, আছে আকাশ পৃথিবীর জানাজানি, রয়েছে আন্তর্জাতিক বিশ্ব। সব মিলিয়ে রেজাউদ্দিন স্টালিনের একটা নিজস্ব ভিন্ন রকমের জগৎ। স্টালিনের কবিতা এই সঙ্গে আত্মজৈবনিক সর্বজনীন।' রেজাউদ্দিন স্টালিন ইতোমধ্যেই এক অনুকরণীয় কণ্ঠস্বরে উন্নীত হয়েছেন। তার 'বায়োডাটা' এবারের বইমেলায় বহুল বিক্রয়ের তালিকায় রয়েছে। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। মূল্য ১৩৫/- টাকা।
হাসনাত মোবারক


১০০০ অমৃত কথা
বাঙালির ইতিহাসে প্রবচনের বিশেষ গুরুত্ব আছে। আদিকাল থেকে বিভিন্ন প্রবচনের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার বিষয়টি প্রসারিত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির বর্তমান যুগেও আমরা ভুলে যাইনি বিভিন্ন প্রবচন। বাঙালির নিত্যজীবন যাপনে এখনো বাণী, প্রচবন কিংবা অমৃত কথার বিশেষ ভূমিকা আছে। প্রবচনের কথা আসতেই আমাদের মনে পড়ে খনার বচনের কথা। খনার বচন বা অমৃত কথা এখনো বাঙালির মুখে মুখে লেগে আছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় একটি বচন। যেমন_ 'কলা রুয়ে না কাট পাত/তাতেই কাপড় তাতেই ভাত' একটি ছোট-অন্ত্যমিল সস্নোগানের মতো এটি। প্রতীকী এই বচনে ফুটে উঠেছে কলা চাষের যত্নের কথা। বাঙালির জীবনে খনার অন্য একটি বচন হলো_ 'যদি বর্ষে মাঘের শেষ/ধন্য রাজার পুণ্য দেশ' খনা বচনের মাধ্যমে বাঙালি সমাজকে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করেছেন।
সাংবাদিক, লেখক সালাম সালেহ উদদীন নিজেও হয়তো খনার বচন কিংবা অমৃত কথার দ্বারা বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তারই ফল হলো তার লেখা ১০০০ অমৃত কথা। ৮০ পৃষ্ঠার বইয়ে মলাটবন্দি করেছেন ১০০০ অমৃত কথা, সমাজের প্রতিটি বিষয়কেই তিনি বচনের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেছেন। বইটির মলাট ওল্টাতেই চোখে পড়ে ফ্ল্যাপ। তাতে কয়েকটি অমৃত কথা রয়েছে। এগুলোকে ভূমিকা বচন বলা যেতে পারে। ভূমিকা বচনের শুরুটি হলো_ 'ফুলের সৌন্দর্য যে না বোঝে সে জীবনের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারে না' শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এমন বচন সাজানো হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অমৃত কথা পাঠকের জন্য বলে দিচ্ছি। ক্রমিক নাম্বার দিয়ে সাজানো এক নাম্বার অমৃত কথা হলো_ 'মানুষের কণ্ঠ চেহারা প্রত্যেকেরই প্রায় আলাদা_ এটা সৃষ্টির বিস্ময়। কিন্তু মানুষ যখন আপনজন দ্বারা প্রতারিত হয় তখন আরো বিস্ময় জাগে।' চার নাম্বার অমৃত কথা হলো_ 'ভাগ্যের অপর নাম চেষ্টা বা সংগ্রাম, কেবল ভাগ্যনির্ভর মানুষ অলস, অকর্মণ্য হয়। ভাগ্য এসে তখনই ধরা দেয় যখন মানুষ কঠোর পরিশ্রম করে। কেবল লটারিতে জিতে বা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে হয়তো পরিশ্রম ছাড়া ভাগ্যের চাকা ঘোরানো সম্ভব। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে আমাদের বদনাম রয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে একশ্রেণির মানুষ ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে নিচ্ছে।' এই অমৃত কথা শতভাগ সত্য।
জন্মই আমার আজন্ম পাপ_ শিরোনামের একটি কাব্যগ্রন্থে কবির হতাশা প্রকাশিত হয়েছিল। আজও দেশের বেশির ভাগ মানুষ হতাশাগ্রস্ত। জীবনটাকে অনেকেই নাটক মনে করে বিশ্লেষণ করেন। আসলেই তৃতীয় বিশ্বের অধিবাসী আমরা সবাই নাটকে অভিনয় করে চলেছি। ৯৭ নাম্বার অমৃত কথা_ 'জীবন নাটকে আমরা কম-বেশি সবাই অভিনেতা, যিনি দক্ষ তিনিই সফল।' অমৃত কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ভূপেন হাজারিকার বিখ্যাত গান_ 'জীবন নাটকের নাট্যকার বিধাতা...' নগর জীবন নিয়ে তার অমৃত কথার ১২০- বলা হয়েছে_ 'নগর জীবনের অপর নাম নিষ্ঠুরতা আর অমানবিকতা। যারা এসব রপ্ত করতে পারেনি তারা গ্রাম্য।' অমৃত কথায় উঠে এসেছে শহরের মানুষের নিষ্ঠুরতার কথা, দিন দিন শহুরে মানুষের জীবনযাপন হয়ে উঠছে নিষ্ঠুর আর অমানবিক। ২৫৯ নাম্বার অমৃত কথা_ 'স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি যে দেশে নেই, সে দেশে বাস করা উচিত নয়।' অমৃত কথাটির বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। কারণ তা আমরা নিত্যদিন টের পাচ্ছি। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে ৫১৭টি অমৃত কথা শোভা প্রকাশ থেকে বের হয়েছে অমৃত কথা নামে।
পেশায় সাংবাদিক সালাম সালেহ উদদীন নিরন্তর লিখে চলেছেন। উপন্যাস, গল্প, কলামসহ সব ধরনের লেখা লিখছেন। ১০০০ অমৃত কথা তার একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রয়াস। আশা করি তার প্রচেষ্টা সফল হবে। পাঠক বইটিকে সাদরে গ্রহণ করবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
১০০০ অমৃত কথা
সালাম সালেহ উদদীন, মিজান পাবলিশার্স
ফেব্রুয়ারি ২০১৫, মূল্য : ১২৫ টাকা
শহীদ খান

হৃদয় চিরিয়া যদি দেখাতে পারিতাম
উপন্যাস মূলত জীবনের বিশদ বিবরণ। আর সে জীবনেরই নৈমিত্তিক ঘটনাগুলোই যখন একজন লেখক তার উপলব্ধি এবং নিজস্ব ভাষার বুননে উপস্থাপন করেন। আর সেই অনুভূতির সঙ্গে পাঠক একাত্ম হয়, তখনই উপন্যাস পাঠের যে মুগ্ধতা, তা বোঝা যায়। মঈনুদ্দিন কাজলও 'হৃদয় চিরিয়া যদি দেখাতে পারিতাম' উপন্যাসে কাহিনীকে এমনভাবে বিন্যস্তত্ম করতে প্রয়াসী হয়ে ওঠেন যে, সেই কাহিনীর সাবলীল উপস্থাপন আমাদের অনুভূতিতে চেনা-অচেনার দোলাচলে ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। উপন্যাসে সমাজ, জীবন, বাস্তবতার সংঘাত, টানাপড়েন এবং নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনাগুলো যখন স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশে জীবন্ত হয়ে ওঠে আর অনুভূতিকে উস্কে দেয়; তখন তার মধ্য দিয়ে পাঠকের মনেও একেকটি দৃশ্যের অবতারণা হয়। একেকটি অংশ হয়ে ওঠে। এটা অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন অনুষঙ্গের মধ্যেও অপরিহার্য বিষয় হয়ে ওঠে 'প্রেম' এই প্রেম নিয়ে কল্পকথা, কত কাহিনী, আবেগ, কবিতা, গান, ছবি। যেন প্রেমের ক্রিয়াশীল এই অনুভূতির ব্যঞ্জনা শেষ হয় না কখনো। যেন তার শেষও নেই কোনো। সময় বয়ে গেলেও বার বার প্রেম উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। রহস্যাবৃত হয়ে ওঠে এমনভাবে যে, তার কোনো আবেদনই শেষ হয় না। সবকিছু বদলে গেলেও, মানুষের পাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা, যে বাসনা হৃদয়ে প্রজ্বলিত তা স্তিমিত হতে চায় না। মঈনুদ্দিন কাজলও প্রেমের এমনই এক কাহিনী তুলে ধরেন যেখানে পাওয়ার তীব্র বাসনা জেগে থাকে।
এই অপরিহার্য বাস্তবতাতেই আমরা মঈনুদ্দিন কাজলের উপন্যাসে লক্ষ্য করি, প্রেমের সরল উপাখ্যান যেখানে ভালোবেসে পাওয়ার এক তীব্র বাসনা স্পষ্ট। যেখানে সাবরিনা রায়হানের কথা ভাবে, তখন ভাবে_ যখন আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ জ্বলজ্বল করছে। আর সেই আলো সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন এক মায়াময় পরিস্থিতির মধ্যেই যে ভালোবাসার মানুষটির কথা ভাবনায় আসে, আবেগকে উপস্থাপনের মধ্য দিয়েই শুরু হয় উপন্যাসের। এরপর বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে এড়িয়ে যেতে থাকে কাহিনী। হাতে হাত, ভালোবাসার মানুষের সানি্নধ্য, পরস্পরের কাছে আসার তীব্রতা সবই। আর এসব উপস্থাপনের মধ্য দিয়েই লেখক যেন এমন এক দৃশ্য তুলে আনেন তা পাঠকের হৃদয়কেও আন্দোলিত করে। কাহিনীর ভেতরে যে বোধ তা প্রাত্যহিক ঘটমান বিষয়গুলোকেই নতুন উন্মাদনায় প্রতিস্থাপন করতে চায় পাঠকের মননে। উপন্যাসের নায়ক অসুস্থ হয়েও হাসপাতালে যখন অপারেশন করবে তখন তার কাছে জীবনের ভয়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে প্রিয় মানুষটির মুখ। যদি রায়হান মারা যায় তবে সাবরিনার কী হবে? এমন প্রেমের অনুভূতি সত্যিই জীবনের পরতে পরতে এক অপূর্ব দোলাচলে উন্মাদ করে দেয় মনকে। মঈনুদ্দিন কাজলের এই পথচলা আরো সুদূর হোক। তার জন্য শুভ কামনা।
প্রকাশক : রিদম প্রকাশনা সংস্থা
প্রচ্ছদ : মোমিন উদ্দীন খালেদ
মূল্য : ১৫০ টাকা

যত দূরে যাও
'
যত দূরে যাও' উপন্যাসের নামকরণের মধ্য দিয়েই প্রিয়জনের দূরে চলে যাওয়ার এক হাহাকারের ছবি ভেসে ওঠে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এই প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতও থাকে যে, দূরত্বও প্রেমের কাছে কিছু নয়! অর্থা দূরত্ব প্রেমের অনুভবকে মস্নান করতে পারে না। সত্যিকারের প্রিয়জন দূরে গেলেও প্রিয়ই থেকে যায়। উপন্যাসেও লেখক বর্ণনা করেন প্রিয়জনের এমনই দূরে যাওয়ার এক প্রতিচ্ছবি যেখানে প্রিয় মানুষ দূরে গেলে যেন অনুভূতিগুলো আরো বেসামাল হয়ে উঠতে চায়। উপন্যাসেই দেখা যায় নায়ক তার নায়িকার চলে যাওয়ার আগমুহূর্তে বলে, 'আমি তোমাকে থামাতে আসিনি। সে অধিকারও আমার নেই। যেখানেই যাও, যত দূরে যাও, ভালো থেকো।' একজন প্রেমিকের এই চাওয়ার মূল্য কতখানি? এই অমীমাংসিত বিষয় আমলে নিয়েই এই সত্য অস্বীকার করা যায় না যে, চলে যাওয়া, কাছে আসা সবই প্রেমের এমন এক আস্ফালন যা মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণভাবেই অনুরণন তোলে। চলে যাওয়ার যন্ত্রণা বুকে নিয়েই মানুষ বাঁচতে চায় আবারো। লেখক সহজভাবে এরকমই এক বিয়োগান্ত কাহিনী বর্ণনা করেন। পাঠকের হৃদয়েও একধরনের বিয়োগান্ত অনুভবকে টেনে বের করে আনেন।
আর এটা বলা জরুরি যে, প্রেমের মিলনের অনুভূতি যেমন উন্মাদনার তেমনি বিয়োগান্ত বিষয়গুলোও ক্রিয়াশীল। উপন্যাসেও লেখক প্রেমের এমনই এক অপূর্ব কাহিনী উপস্থাপন করেন। যেখানে পাঠকেরও মন বিষাদগ্রস্ত হতে পারে অনুভূতির সঙ্গে মিশে। মোহাম্মদ আলী কাওসার আগামীতে আরো বেশি দক্ষতার স্বাক্ষর রাখবেন, আরো অনুভূতির ধারালো লেখনীতে পাঠককে তৃপ্ত করবেন_ সে প্রত্যাশাই রইল।
প্রকাশক : শোভা প্রকাশ
প্রচ্ছদ : সুখেন দাস, মূল্য : ১২৫ টাকা

ত্রিতাল
ত্রিতাল নাম শুনলেই গানের কথা মনে আসে। হয়তো কবির গানের প্রতিও দুর্বলতা আছে। কবি এই কাব্যগ্রন্থের শুরুতে নিজেই বলেছেন, 'কবিতা গান আবৃত্তি_ আমার নিত্য সহচর' কবির জীবনের বিষয়গুলো নিত্যনৈমিত্তিক জীবনযাপনের অনুভূতি যখন কবিতায় আনেন তখন ব্যঞ্জনাময় হয়ে ওঠে কাব্যিক ধারায়। ত্রিতাল কাব্যগ্রন্থে কবি তার কবিতার উপজীব্য হিসেবে অভিমান, ভালোলাগা-মন্দলাগা, প্রগাঢ় অনুভূতির দোলাচল, বিদ্রোহ, জটিলতাসহ বিভিন্ন বিষয় হাজির করেন। জীবনের একেকটি অনুভবকে তিনি যেভাবে তার কবিতায় উপস্থাপন করেছেন তা প্রশংসার দাবিদার। যদিও এই পথের শেষ নেই। ক্রমাগত সাধনাই কবিকে আরো শানিত করে। কিন্তু এটা বলা যায় যে, তামান্না জেসমিনের কবিতার পরতে পরতে তার মেধার স্বাক্ষর মেলে। তার কবিতায় যে ছবি অাঁকতে চান তিনি, তা জীবন্ত হয়ে ওঠে অনুভূতিতে। তামান্না জেসমিনের প্রথম কবিতাতেই তিনি এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন যা বৈষম্যহীন। তিনি আহ্বান জানান_ 'এসো শান্তির মিছিলে যোগ দিই/এসো সাম্যের পৃথিবী গড়ি'
কখনো কখনো কবি খুব সহজভাবে এমন এক বিষয়কে আনেন যা হয়তো খুবই চেনা, কিন্তু তিনি যখন কাব্যিক ধারায় তা উপস্থাপন করেন তখন যেন তা আরো বেশি সাবলীল হয়ে ওঠে। খুব অবলীলায় তিনি পরম সত্যকে সহজভাবে বলতে পারেন। 'চলে যায়' কবিতায় দেখা যায় তার উপস্থাপন_ 'যে চলে যায়/সে আর ফিরে আসে না/তাকে পিছু ডেকে/কোনো লাভ নেই' এরকম সত্যর এক অমোঘ উচ্চারণ কবি তামান্না জেসমিনের কবিতাকে ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়।
প্রকাশক : বাংলালিপি
প্রচ্ছদ : জুবায়ের কেওলিন
মূল্য : ৩০০ টাকা
আহমেদ নিলয়

ক্যামেরার পেছনের মানুষ
এবার বইমেলায় 'দেশ পাবলিকেশন্স' থেকে প্রকাশিত হয়েছে কথাশিল্পী আখতার জামানের তৃতীয় গল্পগ্রন্থ 'ক্যামেরার পেছনের মানুষ' মোট সাতটি গল্পের সঙ্কলন এটি। আখতার জামানের গল্পে মধ্যবিত্ত জীবনের অস্তিত্বের সঙ্কট, আনন্দ-বেদনা, আশা-নিরাশার চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সমাজ রাষ্ট্রে অসহায় বিচিত্র মানুষ তার গল্পে জায়গা করে নেয়। মানুষের লেবাসকে উন্মোচন করে, তার ভেতরের কদর্য সৌন্দর্যকে বের করে এনে পাঠকের সামনে প্রদর্শন করতে তিনি সিদ্ধহস্ত। গ্রন্থের প্রথম গল্প 'ডোম' আমাদের সমাজে নিগৃহীত ডোমদের দুঃসহ জীবন প্রেম এবং বঞ্চনার চিত্র ফুটে উঠেছে এতে।
'
বিবি চাপানো খেলা' চিত্রিত হয়েছে মফস্বলি রূপান্তরশীল জীবন। নগরায়ণের থাবায় গ্রাস হচ্ছে গ্রাম। ফলে চির চেনাজানা পরিবেশ মানুষজন বদলে গিয়ে অচেনা হয়ে উঠছে_ যা সত্যি উদ্বেগজনক।
ব্যঙ্গাত্মক ঢঙে লোভী, দুর্নীতিবাজ এক - নেতার মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে 'হা-মুখ' গল্পে। মৃত্যুর পরও যেন তার সবকিছু গ্রাস করার ইচ্ছা দূর হয় না। আরো খেতে চায় সে।
একজন বিখ্যাত কবির পরকীয়া প্রেম লক্ষ্যযোগ্য হয়ে ওঠে 'একটি ইঁদুর, বিড়াল দত্তক বালকপুত্রের গল্প'-এ।
নগরে ভদ্রতার মুখোশ পরে একশ্রেণির অর্থলোভী মানুষ পতিতাবৃত্তি ব্যবসা চালায়। গ্রামের অসহায় মেয়েরা তাদের নিষ্ঠুর শিকারে পরিণত হয়। এসব মেয়ের অন্তর্গত যন্ত্রণার গল্প 'কাকটা এখন শহরের পাখি'
সমাজ রাষ্ট্রে নির্যাতিত, নিষ্পেষিত নিম্নবর্গীয় মানুষের অসহায়ত্ব, দুঃখ-কষ্টকে পুঁজি করে মিডিয়া মিডিয়াকর্মীরা লাভবান হলেও, সেই অসহায় মানুষের ভাগ্যের কোনোই পরিবর্তন হয় না। চিরকাল তারা পড়ে থাকে অন্ধকারে। 'ক্যামেরার পেছনের মানুষ'- সত্যই উন্মোচিত হয়েছে।
'
হলুদ পাখি-নীল পাখি' গল্পে নারী অর্থলোভী মানুষের চরিত্র নিখুঁতভাবে চিত্রিত করেছেন আখতার জামান। মানুষের অসহায়ত্বকে এসব মানুষ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে স্বার্থ হাসিলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।
আগের গল্পগ্রন্থ দুটিতে আখতার জামান হুমায়ূন আহমেদ দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। গ্রন্থে তিনি 'হুমায়ূন' মুক্ত হতে সর্বদা সতর্কদৃষ্টি রেখেছেন। তারপরও ছিটেফোঁটা প্রভাব থাকলেও থাকতে পারে। তবে সেটা তেমন দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। তার ভাষা গতিশীল। গল্পবয়নকৌশলে পাঠককে ধরে রাখার ক্ষমতা রাখে।
ক্যামেরার পেছনের মানুষ
আখতার জামান
দেশ পাবলিকেশন্স
প্রচ্ছদ _ মোস্তাফিজ কারিগর
মূল্য - ১৭০ টাকা।

সূর্যঘড়ি
'
রাতের রূপ একবার যে দেখতে পেয়েছে তার কাছে সেটা উপেক্ষা করা প্রায় অসম্ভব। রাতের নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের একটা রূপ আছে, শান্ত বাতাসের একটা মধুরতা আছে, নির্জন নৈঃশব্দ্যের একটা মাদকতা আছে... কল্পনার রাজপুত্রের কথা বাদ দিয়ে রাতের এই নির্জনে নাছিমা একাকী জেগে সঙ্গীর অপেক্ষায় মগ্ন হয়ে আছে...' (সূর্যঘড়ি, পৃঃ ৪৮)
বইয়ের নাম সূর্যঘড়ি। লেখক নতুন। ইদানীং কলরব করে খুব দ্রুত জনপ্রিয় হতে চায় তরুণ লেখকরা। কিন্তু নীরব সাহিত্য সাধনার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যায়। আবুল বাসারের বইটি পড়ে মনে হয়েছে, এই তরুণ যাপিত অনাগত সময়ের মাঝখানে দ্বিধার দোলাচলে দোলে। যায় দিন ভালো নাকি অপার সম্ভাবনায় আগামী আরো কল্যাণ নিয়ে আসবে আমাদের জীবনে! নিয়ে দ্বিধা। এই উপন্যাসের গল্পের পটভূমি কাহিনী প্রায় চলি্লশ বছর আগেকার সময়ের। যা পড়লে ফিরে যাবেন সেই জগতে, যা আপনি পেরিয়ে এসেছেন চলি্লশ বছর আগে। যখন আপনার বাবা-কাকারা লাঙ্গল-জোয়াল আর গরু দিয়ে জমিনে হালচাষ করতেন। এখন আপনি ইঞ্জিনচালিত ট্রাক্টরে খুব অল্প সময়ে হালচাষের কাজটা সেরে নেন। তখন চিঠির মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে যোগাযোগ করা হতো। এখন এসএমএস, ইন্টারনেট, ফেসবুক, আর স্কাইপির মাধ্যমে যোগাযোগ করতে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে সময় লাগে। সাদা-কালো টেলিভিশনটাতে অ্যালুমিনিয়ামের অ্যান্টেনায় সিলভারের পাতিলের ঢাকনা লাগিয়ে কত সাধনা করে বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিভিন্ন প্রোগ্রাম দেখতে হতো, এখন ঘরে রঙিন টেলিভিশন আছে, স্যাটেলাইট সংযোগে কত চ্যানেল দেখা যায়! তখন হয়তো আপনি আপনার বাবার আঙুল ধরে হেঁটে হেঁটে গঞ্জের হাটে যেতেন, আর হাটের মধ্যস্থলে ডালপালা মেলে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকা বুড়ো বটবৃক্ষের তলে লোকজনের সঙ্গে মিলিত হয়ে সাপ-বেজিতে লড়াই দেখার প্রত্যাশায় বড় বড় দাড়ি-গোঁফওয়ালা একটি লোকের লেকচার শুনে মুগ্ধ হতেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সাপ-বেজিতে লড়াই শুরু না করে লোকটি একটি চামড়ার ব্যাগ থেকে গাছের শেকড়-বাকড় দিয়ে তৈরি নানারকমের ওষুধ বিক্রি শুরু করতে দেখে বিরক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসতেন। কখনো সময় গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যেত। অবশ্য তখন সময় বোঝার উপায় ছিল না। কারণ তখনও মানুষ খুব বেশি ঘড়ি ব্যবহার করতে শেখেনি। তাছাড়া ঘড়ি সহজলভ্যও ছিল না। তাই মানুষ সময় নির্ধারণ করত আকাশের বুকে সূর্যের অবস্থান দেখে। সূর্যঘড়িই ছিল সময় নির্ধারণের একমাত্র উপায়। চলি্লশ বছর আগেকার সেই সময়ের মানুষের জীবনযাপন, আচার-আচরণের চালচিত্র বর্ণিত হয়েছে এই উপন্যাসের কাহিনীতে। বইটি অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশ করেছে_
লেখক : আবুল বাসার
প্রকাশক : দি রয়েল পাবলিশার্স
প্রচ্ছদ : সহিদুল ইসলাম রনি
পৃষ্ঠা : ৮০, মূল্য : ১৫০ টাকা
সমীর আহমেদ


নতুন বইবায়োডাটা
রেজাউদ্দিন স্টালিন বর্তমান বাংলা কবিতার গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর। তার পুরাণমনস্ক ইতিহাসচেতনা আমাদের ভৌগোলিক সীমারেখাকে বিস্তৃত করে দেয়। এবারের একুশে বইমেলায় তার ৯টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে 'বায়োডাটা' প্রকাশ করেছে কুঁড়েঘর প্রকাশনী। এ গ্রন্থের ৭২টি কবিতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কবিতা বায়োডাটা, নিসিদ্ধ সংখ্যা, সময়ের গল্প, এক মৃত ব্যক্তির সাক্ষাৎকার ইত্যাদি। করপোরেট সংস্কৃতিতে বায়োডাটানির্ভর মানবজীবনের বিরুদ্ধে তিনি দ্রোহের বাণী উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, আমার আলাদা কোনো বায়োডাটা নেই/জন্মেছি মানুষ হিসেবে এই আমার বায়োডাটা। বর্তমান বিশ্বপরিপ্রেক্ষিত এবং সমাজ বাস্তবতায় রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতা এক দায়বদ্ধ শিল্পের ইতিহাস। এই অস্থির সময়ের বিরুদ্ধে রেজাউদ্দিন স্টালিন অমোঘ উচ্চারণ আমাদের সচকিত করে। গবেষক ও লেখক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতা সম্পর্কে বলেন_
<a href='http://bdads.bd-ads.com/ads/www/delivery/ck.php?n=a0d63775&amp;cb=INSERT_RANDOM_NUMBER_HERE' target='_blank'><img src='http://bdads.bd-ads.com/ads/www/delivery/avw.php?zoneid=79&amp;cb=INSERT_RANDOM_NUMBER_HERE&amp;n=a0d63775' border='0' alt='' /></a>
'রেজাউদ্দিন স্টালিনের জগৎটা আমাদের পরিচিত তার সীমানাটা আমরা জানি। কিন্তু ওই সীমানাটা এই কবি মানে না। নিজের শক্তিতে তাকে সে প্রসারিত করে নেয়। এবং একই সঙ্গে গভীরতাও সৃষ্টি করে। দেখার দৃষ্টি, অনুভবের শক্তি, কল্পনার ক্ষমতা, ভাবনার বৈশিষ্ট্য এবং উপস্থাপনার অনুশীলিত দক্ষতায় পরিচিত বিষয়গুলো নতুন হয়ে ওঠে। ওর কবিতায় স্থান আছে, রয়েছে বৃষ্টিভরা আকাশ, আছে আকাশ ও পৃথিবীর জানাজানি, রয়েছে আন্তর্জাতিক বিশ্ব। সব মিলিয়ে রেজাউদ্দিন স্টালিনের একটা নিজস্ব ও ভিন্ন রকমের জগৎ। স্টালিনের কবিতা এই সঙ্গে আত্মজৈবনিক ও সর্বজনীন।' রেজাউদ্দিন স্টালিন ইতোমধ্যেই এক অনুকরণীয় কণ্ঠস্বরে উন্নীত হয়েছেন। তার 'বায়োডাটা' এবারের বইমেলায় বহুল বিক্রয়ের তালিকায় রয়েছে। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। মূল্য ১৩৫/- টাকা।
হাসনাত মোবারক


১০০০ অমৃত কথা
বাঙালির ইতিহাসে প্রবচনের বিশেষ গুরুত্ব আছে। আদিকাল থেকে বিভিন্ন প্রবচনের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার বিষয়টি প্রসারিত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির বর্তমান যুগেও আমরা ভুলে যাইনি বিভিন্ন প্রবচন। বাঙালির নিত্যজীবন যাপনে এখনো বাণী, প্রচবন কিংবা অমৃত কথার বিশেষ ভূমিকা আছে। প্রবচনের কথা আসতেই আমাদের মনে পড়ে খনার বচনের কথা। খনার বচন বা অমৃত কথা এখনো বাঙালির মুখে মুখে লেগে আছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় একটি বচন। যেমন_ 'কলা রুয়ে না কাট পাত/তাতেই কাপড় তাতেই ভাত'। একটি ছোট-অন্ত্যমিল সস্নোগানের মতো এটি। প্রতীকী এই বচনে ফুটে উঠেছে কলা চাষের যত্নের কথা। বাঙালির জীবনে খনার অন্য একটি বচন হলো_ 'যদি বর্ষে মাঘের শেষ/ধন্য রাজার পুণ্য দেশ'। খনা বচনের মাধ্যমে বাঙালি সমাজকে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করেছেন।
সাংবাদিক, লেখক সালাম সালেহ উদদীন নিজেও হয়তো খনার বচন কিংবা অমৃত কথার দ্বারা বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তারই ফল হলো তার লেখা ১০০০ অমৃত কথা। ৮০ পৃষ্ঠার এ বইয়ে মলাটবন্দি করেছেন ১০০০ অমৃত কথা, সমাজের প্রতিটি বিষয়কেই তিনি বচনের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেছেন। বইটির মলাট ওল্টাতেই চোখে পড়ে ফ্ল্যাপ। তাতে কয়েকটি অমৃত কথা রয়েছে। এগুলোকে ভূমিকা বচন বলা যেতে পারে। ভূমিকা বচনের শুরুটি হলো_ 'ফুলের সৌন্দর্য যে না বোঝে সে জীবনের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারে না'। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এমন বচন সাজানো হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অমৃত কথা পাঠকের জন্য বলে দিচ্ছি। ক্রমিক নাম্বার দিয়ে সাজানো এক নাম্বার অমৃত কথা হলো_ 'মানুষের কণ্ঠ ও চেহারা প্রত্যেকেরই প্রায় আলাদা_ এটা সৃষ্টির বিস্ময়। কিন্তু মানুষ যখন আপনজন দ্বারা প্রতারিত হয় তখন আরো বিস্ময় জাগে।' চার নাম্বার অমৃত কথা হলো_ 'ভাগ্যের অপর নাম চেষ্টা বা সংগ্রাম, কেবল ভাগ্যনির্ভর মানুষ অলস, অকর্মণ্য হয়। ভাগ্য এসে তখনই ধরা দেয় যখন মানুষ কঠোর পরিশ্রম করে। কেবল লটারিতে জিতে বা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে হয়তো পরিশ্রম ছাড়া ভাগ্যের চাকা ঘোরানো সম্ভব। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে আমাদের বদনাম রয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে একশ্রেণির মানুষ ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে নিচ্ছে।' এই অমৃত কথা শতভাগ সত্য।
জন্মই আমার আজন্ম পাপ_ শিরোনামের একটি কাব্যগ্রন্থে কবির হতাশা প্রকাশিত হয়েছিল। আজও দেশের বেশির ভাগ মানুষ হতাশাগ্রস্ত। জীবনটাকে অনেকেই নাটক মনে করে বিশ্লেষণ করেন। আসলেই তৃতীয় বিশ্বের অধিবাসী আমরা সবাই নাটকে অভিনয় করে চলেছি। ৯৭ নাম্বার অমৃত কথা_ 'জীবন নাটকে আমরা কম-বেশি সবাই অভিনেতা, যিনি দক্ষ তিনিই সফল।' এ অমৃত কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ভূপেন হাজারিকার বিখ্যাত গান_ 'জীবন নাটকের নাট্যকার বিধাতা...'। নগর জীবন নিয়ে তার অমৃত কথার ১২০-এ বলা হয়েছে_ 'নগর জীবনের অপর নাম নিষ্ঠুরতা আর অমানবিকতা। যারা এসব রপ্ত করতে পারেনি তারা গ্রাম্য।' এ অমৃত কথায় উঠে এসেছে শহরের মানুষের নিষ্ঠুরতার কথা, দিন দিন শহুরে মানুষের জীবনযাপন হয়ে উঠছে নিষ্ঠুর আর অমানবিক। ২৫৯ নাম্বার অমৃত কথা_ 'স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি যে দেশে নেই, সে দেশে বাস করা উচিত নয়।' এ অমৃত কথাটির বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। কারণ তা আমরা নিত্যদিন টের পাচ্ছি। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে ৫১৭টি অমৃত কথা শোভা প্রকাশ থেকে বের হয়েছে অমৃত কথা নামে।
পেশায় সাংবাদিক সালাম সালেহ উদদীন নিরন্তর লিখে চলেছেন। উপন্যাস, গল্প, কলামসহ সব ধরনের লেখা লিখছেন। ১০০০ অমৃত কথা তার একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রয়াস। আশা করি তার এ প্রচেষ্টা সফল হবে। পাঠক বইটিকে সাদরে গ্রহণ করবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
১০০০ অমৃত কথা
সালাম সালেহ উদদীন, মিজান পাবলিশার্স
ফেব্রুয়ারি ২০১৫, মূল্য : ১২৫ টাকা
শহীদ খান

হৃদয় চিরিয়া যদি দেখাতে পারিতাম
উপন্যাস মূলত জীবনের বিশদ বিবরণ। আর সে জীবনেরই নৈমিত্তিক ঘটনাগুলোই যখন একজন লেখক তার উপলব্ধি এবং নিজস্ব ভাষার বুননে উপস্থাপন করেন। আর সেই অনুভূতির সঙ্গে পাঠক একাত্ম হয়, তখনই উপন্যাস পাঠের যে মুগ্ধতা, তা বোঝা যায়। মঈনুদ্দিন কাজলও 'হৃদয় চিরিয়া যদি দেখাতে পারিতাম' উপন্যাসে কাহিনীকে এমনভাবে বিন্যস্তত্ম করতে প্রয়াসী হয়ে ওঠেন যে, সেই কাহিনীর সাবলীল উপস্থাপন আমাদের অনুভূতিতে চেনা-অচেনার দোলাচলে ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। উপন্যাসে সমাজ, জীবন, বাস্তবতার সংঘাত, টানাপড়েন এবং নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনাগুলো যখন স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশে জীবন্ত হয়ে ওঠে আর অনুভূতিকে উস্কে দেয়; তখন তার মধ্য দিয়ে পাঠকের মনেও একেকটি দৃশ্যের অবতারণা হয়। একেকটি অংশ হয়ে ওঠে। এটা অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন অনুষঙ্গের মধ্যেও অপরিহার্য বিষয় হয়ে ওঠে 'প্রেম'। এই প্রেম নিয়ে কল্পকথা, কত কাহিনী, আবেগ, কবিতা, গান, ছবি। যেন প্রেমের ক্রিয়াশীল এই অনুভূতির ব্যঞ্জনা শেষ হয় না কখনো। যেন তার শেষও নেই কোনো। সময় বয়ে গেলেও বার বার প্রেম উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। রহস্যাবৃত হয়ে ওঠে এমনভাবে যে, তার কোনো আবেদনই শেষ হয় না। সবকিছু বদলে গেলেও, মানুষের পাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা, যে বাসনা হৃদয়ে প্রজ্বলিত তা স্তিমিত হতে চায় না। মঈনুদ্দিন কাজলও প্রেমের এমনই এক কাহিনী তুলে ধরেন যেখানে পাওয়ার তীব্র বাসনা জেগে থাকে।
এই অপরিহার্য বাস্তবতাতেই আমরা মঈনুদ্দিন কাজলের উপন্যাসে লক্ষ্য করি, প্রেমের সরল উপাখ্যান যেখানে ভালোবেসে পাওয়ার এক তীব্র বাসনা স্পষ্ট। যেখানে সাবরিনা রায়হানের কথা ভাবে, তখন ভাবে_ যখন আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ জ্বলজ্বল করছে। আর সেই আলো সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন এক মায়াময় পরিস্থিতির মধ্যেই যে ভালোবাসার মানুষটির কথা ভাবনায় আসে, এ আবেগকে উপস্থাপনের মধ্য দিয়েই শুরু হয় উপন্যাসের। এরপর বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে এড়িয়ে যেতে থাকে কাহিনী। হাতে হাত, ভালোবাসার মানুষের সানি্নধ্য, পরস্পরের কাছে আসার তীব্রতা এ সবই। আর এসব উপস্থাপনের মধ্য দিয়েই লেখক যেন এমন এক দৃশ্য তুলে আনেন তা পাঠকের হৃদয়কেও আন্দোলিত করে। কাহিনীর ভেতরে যে বোধ তা প্রাত্যহিক ঘটমান বিষয়গুলোকেই নতুন উন্মাদনায় প্রতিস্থাপন করতে চায় পাঠকের মননে। উপন্যাসের নায়ক অসুস্থ হয়েও হাসপাতালে যখন অপারেশন করবে তখন তার কাছে জীবনের ভয়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে প্রিয় মানুষটির মুখ। যদি রায়হান মারা যায় তবে সাবরিনার কী হবে? এমন প্রেমের অনুভূতি সত্যিই জীবনের পরতে পরতে এক অপূর্ব দোলাচলে উন্মাদ করে দেয় মনকে। মঈনুদ্দিন কাজলের এই পথচলা আরো সুদূর হোক। তার জন্য শুভ কামনা।
প্রকাশক : রিদম প্রকাশনা সংস্থা
প্রচ্ছদ : মোমিন উদ্দীন খালেদ
মূল্য : ১৫০ টাকা

যত দূরে যাও
'যত দূরে যাও' উপন্যাসের নামকরণের মধ্য দিয়েই প্রিয়জনের দূরে চলে যাওয়ার এক হাহাকারের ছবি ভেসে ওঠে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এই প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতও থাকে যে, দূরত্বও প্রেমের কাছে কিছু নয়! অর্থাৎ দূরত্ব প্রেমের অনুভবকে মস্নান করতে পারে না। সত্যিকারের প্রিয়জন দূরে গেলেও প্রিয়ই থেকে যায়। উপন্যাসেও লেখক বর্ণনা করেন প্রিয়জনের এমনই দূরে যাওয়ার এক প্রতিচ্ছবি যেখানে প্রিয় মানুষ দূরে গেলে যেন অনুভূতিগুলো আরো বেসামাল হয়ে উঠতে চায়। উপন্যাসেই দেখা যায় নায়ক তার নায়িকার চলে যাওয়ার আগমুহূর্তে বলে, 'আমি তোমাকে থামাতে আসিনি। সে অধিকারও আমার নেই। যেখানেই যাও, যত দূরে যাও, ভালো থেকো।' একজন প্রেমিকের এই চাওয়ার মূল্য কতখানি? এই অমীমাংসিত বিষয় আমলে নিয়েই এই সত্য অস্বীকার করা যায় না যে, চলে যাওয়া, কাছে আসা সবই প্রেমের এমন এক আস্ফালন যা মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণভাবেই অনুরণন তোলে। চলে যাওয়ার যন্ত্রণা বুকে নিয়েই মানুষ বাঁচতে চায় আবারো। লেখক সহজভাবে এরকমই এক বিয়োগান্ত কাহিনী বর্ণনা করেন। পাঠকের হৃদয়েও একধরনের বিয়োগান্ত অনুভবকে টেনে বের করে আনেন।
আর এটা বলা জরুরি যে, প্রেমের মিলনের অনুভূতি যেমন উন্মাদনার তেমনি বিয়োগান্ত বিষয়গুলোও ক্রিয়াশীল। এ উপন্যাসেও লেখক প্রেমের এমনই এক অপূর্ব কাহিনী উপস্থাপন করেন। যেখানে পাঠকেরও মন বিষাদগ্রস্ত হতে পারে অনুভূতির সঙ্গে মিশে। মোহাম্মদ আলী কাওসার আগামীতে আরো বেশি দক্ষতার স্বাক্ষর রাখবেন, আরো অনুভূতির ধারালো লেখনীতে পাঠককে তৃপ্ত করবেন_ সে প্রত্যাশাই রইল।
প্রকাশক : শোভা প্রকাশ
প্রচ্ছদ : সুখেন দাস, মূল্য : ১২৫ টাকা

ত্রিতাল
ত্রিতাল নাম শুনলেই গানের কথা মনে আসে। হয়তো কবির গানের প্রতিও দুর্বলতা আছে। কবি এই কাব্যগ্রন্থের শুরুতে নিজেই বলেছেন, 'কবিতা গান আবৃত্তি_ এ আমার নিত্য সহচর'। কবির জীবনের এ বিষয়গুলো ও নিত্যনৈমিত্তিক জীবনযাপনের অনুভূতি যখন কবিতায় আনেন তখন ব্যঞ্জনাময় হয়ে ওঠে কাব্যিক ধারায়। ত্রিতাল কাব্যগ্রন্থে কবি তার কবিতার উপজীব্য হিসেবে অভিমান, ভালোলাগা-মন্দলাগা, প্রগাঢ় অনুভূতির দোলাচল, বিদ্রোহ, জটিলতাসহ বিভিন্ন বিষয় হাজির করেন। জীবনের একেকটি অনুভবকে তিনি যেভাবে তার কবিতায় উপস্থাপন করেছেন তা প্রশংসার দাবিদার। যদিও এই পথের শেষ নেই। ক্রমাগত সাধনাই কবিকে আরো শানিত করে। কিন্তু এটা বলা যায় যে, তামান্না জেসমিনের কবিতার পরতে পরতে তার মেধার স্বাক্ষর মেলে। তার কবিতায় যে ছবি অাঁকতে চান তিনি, তা জীবন্ত হয়ে ওঠে অনুভূতিতে। তামান্না জেসমিনের প্রথম কবিতাতেই তিনি এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন যা বৈষম্যহীন। তিনি আহ্বান জানান_ 'এসো শান্তির মিছিলে যোগ দিই/এসো সাম্যের পৃথিবী গড়ি'।
কখনো কখনো কবি খুব সহজভাবে এমন এক বিষয়কে আনেন যা হয়তো খুবই চেনা, কিন্তু তিনি যখন কাব্যিক ধারায় তা উপস্থাপন করেন তখন যেন তা আরো বেশি সাবলীল হয়ে ওঠে। খুব অবলীলায় তিনি পরম সত্যকে সহজভাবে বলতে পারেন। 'চলে যায়' কবিতায় দেখা যায় তার উপস্থাপন_ 'যে চলে যায়/সে আর ফিরে আসে না/তাকে পিছু ডেকে/কোনো লাভ নেই' এরকম সত্যর এক অমোঘ উচ্চারণ কবি তামান্না জেসমিনের কবিতাকে ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়।
প্রকাশক : বাংলালিপি
প্রচ্ছদ : জুবায়ের কেওলিন
মূল্য : ৩০০ টাকা
আহমেদ নিলয়

ক্যামেরার পেছনের মানুষ
এবার বইমেলায় 'দেশ পাবলিকেশন্স' থেকে প্রকাশিত হয়েছে কথাশিল্পী আখতার জামানের তৃতীয় গল্পগ্রন্থ 'ক্যামেরার পেছনের মানুষ'। মোট সাতটি গল্পের সঙ্কলন এটি। আখতার জামানের গল্পে মধ্যবিত্ত জীবনের অস্তিত্বের সঙ্কট, আনন্দ-বেদনা, আশা-নিরাশার চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সমাজ ও রাষ্ট্রে অসহায় ও বিচিত্র মানুষ তার গল্পে জায়গা করে নেয়। মানুষের লেবাসকে উন্মোচন করে, তার ভেতরের কদর্য ও সৌন্দর্যকে বের করে এনে পাঠকের সামনে প্রদর্শন করতে তিনি সিদ্ধহস্ত। গ্রন্থের প্রথম গল্প 'ডোম'। আমাদের সমাজে নিগৃহীত ডোমদের দুঃসহ জীবন ও প্রেম এবং বঞ্চনার চিত্র ফুটে উঠেছে এতে।
'বিবি চাপানো খেলা'য় চিত্রিত হয়েছে মফস্বলি রূপান্তরশীল জীবন। নগরায়ণের থাবায় গ্রাস হচ্ছে গ্রাম। ফলে চির চেনাজানা পরিবেশ ও মানুষজন বদলে গিয়ে অচেনা হয়ে উঠছে_ যা সত্যি উদ্বেগজনক।
ব্যঙ্গাত্মক ঢঙে লোভী, দুর্নীতিবাজ এক ভ- নেতার মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে 'হা-মুখ' গল্পে। মৃত্যুর পরও যেন তার সবকিছু গ্রাস করার ইচ্ছা দূর হয় না। আরো খেতে চায় সে।
একজন বিখ্যাত কবির পরকীয়া প্রেম লক্ষ্যযোগ্য হয়ে ওঠে 'একটি ইঁদুর, বিড়াল ও দত্তক বালকপুত্রের গল্প'-এ।
নগরে ভদ্রতার মুখোশ পরে একশ্রেণির অর্থলোভী মানুষ পতিতাবৃত্তি ব্যবসা চালায়। গ্রামের অসহায় মেয়েরা তাদের নিষ্ঠুর শিকারে পরিণত হয়। এসব মেয়ের অন্তর্গত যন্ত্রণার গল্প 'কাকটা এখন শহরের পাখি'।
সমাজ ও রাষ্ট্রে নির্যাতিত, নিষ্পেষিত নিম্নবর্গীয় মানুষের অসহায়ত্ব, দুঃখ-কষ্টকে পুঁজি করে মিডিয়া ও মিডিয়াকর্মীরা লাভবান হলেও, সেই অসহায় মানুষের ভাগ্যের কোনোই পরিবর্তন হয় না। চিরকাল তারা পড়ে থাকে অন্ধকারে। 'ক্যামেরার পেছনের মানুষ'-এ সত্যই উন্মোচিত হয়েছে।
'হলুদ পাখি-নীল পাখি' গল্পে নারী ও অর্থলোভী মানুষের চরিত্র নিখুঁতভাবে চিত্রিত করেছেন আখতার জামান। মানুষের অসহায়ত্বকে এসব মানুষ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে স্বার্থ হাসিলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।
আগের গল্পগ্রন্থ দুটিতে আখতার জামান হুমায়ূন আহমেদ দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। এ গ্রন্থে তিনি 'হুমায়ূন' মুক্ত হতে সর্বদা সতর্কদৃষ্টি রেখেছেন। তারপরও ছিটেফোঁটা প্রভাব থাকলেও থাকতে পারে। তবে সেটা তেমন দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। তার ভাষা গতিশীল। গল্পবয়নকৌশলে পাঠককে ধরে রাখার ক্ষমতা রাখে।
ক্যামেরার পেছনের মানুষ
আখতার জামান
দেশ পাবলিকেশন্স
প্রচ্ছদ _ মোস্তাফিজ কারিগর
মূল্য - ১৭০ টাকা।

সূর্যঘড়ি
'রাতের রূপ একবার যে দেখতে পেয়েছে তার কাছে সেটা উপেক্ষা করা প্রায় অসম্ভব। রাতের নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের একটা রূপ আছে, শান্ত বাতাসের একটা মধুরতা আছে, নির্জন নৈঃশব্দ্যের একটা মাদকতা আছে... কল্পনার রাজপুত্রের কথা বাদ দিয়ে রাতের এই নির্জনে নাছিমা একাকী জেগে সঙ্গীর অপেক্ষায় মগ্ন হয়ে আছে...।' (সূর্যঘড়ি, পৃঃ ৪৮)
বইয়ের নাম সূর্যঘড়ি। লেখক নতুন। ইদানীং কলরব করে খুব দ্রুত জনপ্রিয় হতে চায় তরুণ লেখকরা। কিন্তু নীরব সাহিত্য সাধনার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যায়। আবুল বাসারের এ বইটি পড়ে মনে হয়েছে, এই তরুণ যাপিত ও অনাগত সময়ের মাঝখানে দ্বিধার দোলাচলে দোলে। যায় দিন ভালো নাকি অপার সম্ভাবনায় আগামী আরো কল্যাণ নিয়ে আসবে আমাদের জীবনে! এ নিয়ে দ্বিধা। এই উপন্যাসের গল্পের পটভূমি ও কাহিনী প্রায় চলি্লশ বছর আগেকার সময়ের। যা পড়লে ফিরে যাবেন সেই জগতে, যা আপনি পেরিয়ে এসেছেন চলি্লশ বছর আগে। যখন আপনার বাবা-কাকারা লাঙ্গল-জোয়াল আর গরু দিয়ে জমিনে হালচাষ করতেন। এখন আপনি ইঞ্জিনচালিত ট্রাক্টরে খুব অল্প সময়ে হালচাষের কাজটা সেরে নেন। তখন চিঠির মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে যোগাযোগ করা হতো। এখন এসএমএস, ইন্টারনেট, ফেসবুক, আর স্কাইপির মাধ্যমে যোগাযোগ করতে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে সময় লাগে। সাদা-কালো টেলিভিশনটাতে অ্যালুমিনিয়ামের অ্যান্টেনায় সিলভারের পাতিলের ঢাকনা লাগিয়ে কত সাধনা করে বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিভিন্ন প্রোগ্রাম দেখতে হতো, এখন ঘরে রঙিন টেলিভিশন আছে, স্যাটেলাইট সংযোগে কত চ্যানেল দেখা যায়! তখন হয়তো আপনি আপনার বাবার আঙুল ধরে হেঁটে হেঁটে গঞ্জের হাটে যেতেন, আর হাটের মধ্যস্থলে ডালপালা মেলে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকা বুড়ো বটবৃক্ষের তলে লোকজনের সঙ্গে মিলিত হয়ে সাপ-বেজিতে লড়াই দেখার প্রত্যাশায় বড় বড় দাড়ি-গোঁফওয়ালা একটি লোকের লেকচার শুনে মুগ্ধ হতেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সাপ-বেজিতে লড়াই শুরু না করে লোকটি একটি চামড়ার ব্যাগ থেকে গাছের শেকড়-বাকড় দিয়ে তৈরি নানারকমের ওষুধ বিক্রি শুরু করতে দেখে বিরক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসতেন। কখনো সময় গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যেত। অবশ্য তখন সময় বোঝার উপায় ছিল না। কারণ তখনও মানুষ খুব বেশি ঘড়ি ব্যবহার করতে শেখেনি। তাছাড়া ঘড়ি সহজলভ্যও ছিল না। তাই মানুষ সময় নির্ধারণ করত আকাশের বুকে সূর্যের অবস্থান দেখে। সূর্যঘড়িই ছিল সময় নির্ধারণের একমাত্র উপায়। চলি্লশ বছর আগেকার সেই সময়ের মানুষের জীবনযাপন, আচার-আচরণের চালচিত্র বর্ণিত হয়েছে এই উপন্যাসের কাহিনীতে। বইটি অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশ করেছে_
লেখক : আবুল বাসার
প্রকাশক : দি রয়েল পাবলিশার্স
প্রচ্ছদ : সহিদুল ইসলাম রনি
পৃষ্ঠা : ৮০, মূল্য : ১৫০ টাকা
সমীর আহমেদ
- See more at: http://www.jjdin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=24-02-2015&feature=yes&type=single&pub_no=1112&cat_id=3&menu_id=75&news_type_id=1&index=1#sthash.uHxGY7nK.dpuf
নতুন বইবায়োডাটা
রেজাউদ্দিন স্টালিন বর্তমান বাংলা কবিতার গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর। তার পুরাণমনস্ক ইতিহাসচেতনা আমাদের ভৌগোলিক সীমারেখাকে বিস্তৃত করে দেয়। এবারের একুশে বইমেলায় তার ৯টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে 'বায়োডাটা' প্রকাশ করেছে কুঁড়েঘর প্রকাশনী। এ গ্রন্থের ৭২টি কবিতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কবিতা বায়োডাটা, নিসিদ্ধ সংখ্যা, সময়ের গল্প, এক মৃত ব্যক্তির সাক্ষাৎকার ইত্যাদি। করপোরেট সংস্কৃতিতে বায়োডাটানির্ভর মানবজীবনের বিরুদ্ধে তিনি দ্রোহের বাণী উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, আমার আলাদা কোনো বায়োডাটা নেই/জন্মেছি মানুষ হিসেবে এই আমার বায়োডাটা। বর্তমান বিশ্বপরিপ্রেক্ষিত এবং সমাজ বাস্তবতায় রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতা এক দায়বদ্ধ শিল্পের ইতিহাস। এই অস্থির সময়ের বিরুদ্ধে রেজাউদ্দিন স্টালিন অমোঘ উচ্চারণ আমাদের সচকিত করে। গবেষক ও লেখক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতা সম্পর্কে বলেন_
<a href='http://bdads.bd-ads.com/ads/www/delivery/ck.php?n=a0d63775&amp;cb=INSERT_RANDOM_NUMBER_HERE' target='_blank'><img src='http://bdads.bd-ads.com/ads/www/delivery/avw.php?zoneid=79&amp;cb=INSERT_RANDOM_NUMBER_HERE&amp;n=a0d63775' border='0' alt='' /></a>
'রেজাউদ্দিন স্টালিনের জগৎটা আমাদের পরিচিত তার সীমানাটা আমরা জানি। কিন্তু ওই সীমানাটা এই কবি মানে না। নিজের শক্তিতে তাকে সে প্রসারিত করে নেয়। এবং একই সঙ্গে গভীরতাও সৃষ্টি করে। দেখার দৃষ্টি, অনুভবের শক্তি, কল্পনার ক্ষমতা, ভাবনার বৈশিষ্ট্য এবং উপস্থাপনার অনুশীলিত দক্ষতায় পরিচিত বিষয়গুলো নতুন হয়ে ওঠে। ওর কবিতায় স্থান আছে, রয়েছে বৃষ্টিভরা আকাশ, আছে আকাশ ও পৃথিবীর জানাজানি, রয়েছে আন্তর্জাতিক বিশ্ব। সব মিলিয়ে রেজাউদ্দিন স্টালিনের একটা নিজস্ব ও ভিন্ন রকমের জগৎ। স্টালিনের কবিতা এই সঙ্গে আত্মজৈবনিক ও সর্বজনীন।' রেজাউদ্দিন স্টালিন ইতোমধ্যেই এক অনুকরণীয় কণ্ঠস্বরে উন্নীত হয়েছেন। তার 'বায়োডাটা' এবারের বইমেলায় বহুল বিক্রয়ের তালিকায় রয়েছে। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। মূল্য ১৩৫/- টাকা।
হাসনাত মোবারক


১০০০ অমৃত কথা
বাঙালির ইতিহাসে প্রবচনের বিশেষ গুরুত্ব আছে। আদিকাল থেকে বিভিন্ন প্রবচনের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার বিষয়টি প্রসারিত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির বর্তমান যুগেও আমরা ভুলে যাইনি বিভিন্ন প্রবচন। বাঙালির নিত্যজীবন যাপনে এখনো বাণী, প্রচবন কিংবা অমৃত কথার বিশেষ ভূমিকা আছে। প্রবচনের কথা আসতেই আমাদের মনে পড়ে খনার বচনের কথা। খনার বচন বা অমৃত কথা এখনো বাঙালির মুখে মুখে লেগে আছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় একটি বচন। যেমন_ 'কলা রুয়ে না কাট পাত/তাতেই কাপড় তাতেই ভাত'। একটি ছোট-অন্ত্যমিল সস্নোগানের মতো এটি। প্রতীকী এই বচনে ফুটে উঠেছে কলা চাষের যত্নের কথা। বাঙালির জীবনে খনার অন্য একটি বচন হলো_ 'যদি বর্ষে মাঘের শেষ/ধন্য রাজার পুণ্য দেশ'। খনা বচনের মাধ্যমে বাঙালি সমাজকে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করেছেন।
সাংবাদিক, লেখক সালাম সালেহ উদদীন নিজেও হয়তো খনার বচন কিংবা অমৃত কথার দ্বারা বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তারই ফল হলো তার লেখা ১০০০ অমৃত কথা। ৮০ পৃষ্ঠার এ বইয়ে মলাটবন্দি করেছেন ১০০০ অমৃত কথা, সমাজের প্রতিটি বিষয়কেই তিনি বচনের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেছেন। বইটির মলাট ওল্টাতেই চোখে পড়ে ফ্ল্যাপ। তাতে কয়েকটি অমৃত কথা রয়েছে। এগুলোকে ভূমিকা বচন বলা যেতে পারে। ভূমিকা বচনের শুরুটি হলো_ 'ফুলের সৌন্দর্য যে না বোঝে সে জীবনের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারে না'। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এমন বচন সাজানো হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অমৃত কথা পাঠকের জন্য বলে দিচ্ছি। ক্রমিক নাম্বার দিয়ে সাজানো এক নাম্বার অমৃত কথা হলো_ 'মানুষের কণ্ঠ ও চেহারা প্রত্যেকেরই প্রায় আলাদা_ এটা সৃষ্টির বিস্ময়। কিন্তু মানুষ যখন আপনজন দ্বারা প্রতারিত হয় তখন আরো বিস্ময় জাগে।' চার নাম্বার অমৃত কথা হলো_ 'ভাগ্যের অপর নাম চেষ্টা বা সংগ্রাম, কেবল ভাগ্যনির্ভর মানুষ অলস, অকর্মণ্য হয়। ভাগ্য এসে তখনই ধরা দেয় যখন মানুষ কঠোর পরিশ্রম করে। কেবল লটারিতে জিতে বা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে হয়তো পরিশ্রম ছাড়া ভাগ্যের চাকা ঘোরানো সম্ভব। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে আমাদের বদনাম রয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে একশ্রেণির মানুষ ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে নিচ্ছে।' এই অমৃত কথা শতভাগ সত্য।
জন্মই আমার আজন্ম পাপ_ শিরোনামের একটি কাব্যগ্রন্থে কবির হতাশা প্রকাশিত হয়েছিল। আজও দেশের বেশির ভাগ মানুষ হতাশাগ্রস্ত। জীবনটাকে অনেকেই নাটক মনে করে বিশ্লেষণ করেন। আসলেই তৃতীয় বিশ্বের অধিবাসী আমরা সবাই নাটকে অভিনয় করে চলেছি। ৯৭ নাম্বার অমৃত কথা_ 'জীবন নাটকে আমরা কম-বেশি সবাই অভিনেতা, যিনি দক্ষ তিনিই সফল।' এ অমৃত কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ভূপেন হাজারিকার বিখ্যাত গান_ 'জীবন নাটকের নাট্যকার বিধাতা...'। নগর জীবন নিয়ে তার অমৃত কথার ১২০-এ বলা হয়েছে_ 'নগর জীবনের অপর নাম নিষ্ঠুরতা আর অমানবিকতা। যারা এসব রপ্ত করতে পারেনি তারা গ্রাম্য।' এ অমৃত কথায় উঠে এসেছে শহরের মানুষের নিষ্ঠুরতার কথা, দিন দিন শহুরে মানুষের জীবনযাপন হয়ে উঠছে নিষ্ঠুর আর অমানবিক। ২৫৯ নাম্বার অমৃত কথা_ 'স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি যে দেশে নেই, সে দেশে বাস করা উচিত নয়।' এ অমৃত কথাটির বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। কারণ তা আমরা নিত্যদিন টের পাচ্ছি। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে ৫১৭টি অমৃত কথা শোভা প্রকাশ থেকে বের হয়েছে অমৃত কথা নামে।
পেশায় সাংবাদিক সালাম সালেহ উদদীন নিরন্তর লিখে চলেছেন। উপন্যাস, গল্প, কলামসহ সব ধরনের লেখা লিখছেন। ১০০০ অমৃত কথা তার একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রয়াস। আশা করি তার এ প্রচেষ্টা সফল হবে। পাঠক বইটিকে সাদরে গ্রহণ করবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
১০০০ অমৃত কথা
সালাম সালেহ উদদীন, মিজান পাবলিশার্স
ফেব্রুয়ারি ২০১৫, মূল্য : ১২৫ টাকা
শহীদ খান

হৃদয় চিরিয়া যদি দেখাতে পারিতাম
উপন্যাস মূলত জীবনের বিশদ বিবরণ। আর সে জীবনেরই নৈমিত্তিক ঘটনাগুলোই যখন একজন লেখক তার উপলব্ধি এবং নিজস্ব ভাষার বুননে উপস্থাপন করেন। আর সেই অনুভূতির সঙ্গে পাঠক একাত্ম হয়, তখনই উপন্যাস পাঠের যে মুগ্ধতা, তা বোঝা যায়। মঈনুদ্দিন কাজলও 'হৃদয় চিরিয়া যদি দেখাতে পারিতাম' উপন্যাসে কাহিনীকে এমনভাবে বিন্যস্তত্ম করতে প্রয়াসী হয়ে ওঠেন যে, সেই কাহিনীর সাবলীল উপস্থাপন আমাদের অনুভূতিতে চেনা-অচেনার দোলাচলে ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। উপন্যাসে সমাজ, জীবন, বাস্তবতার সংঘাত, টানাপড়েন এবং নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনাগুলো যখন স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশে জীবন্ত হয়ে ওঠে আর অনুভূতিকে উস্কে দেয়; তখন তার মধ্য দিয়ে পাঠকের মনেও একেকটি দৃশ্যের অবতারণা হয়। একেকটি অংশ হয়ে ওঠে। এটা অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন অনুষঙ্গের মধ্যেও অপরিহার্য বিষয় হয়ে ওঠে 'প্রেম'। এই প্রেম নিয়ে কল্পকথা, কত কাহিনী, আবেগ, কবিতা, গান, ছবি। যেন প্রেমের ক্রিয়াশীল এই অনুভূতির ব্যঞ্জনা শেষ হয় না কখনো। যেন তার শেষও নেই কোনো। সময় বয়ে গেলেও বার বার প্রেম উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। রহস্যাবৃত হয়ে ওঠে এমনভাবে যে, তার কোনো আবেদনই শেষ হয় না। সবকিছু বদলে গেলেও, মানুষের পাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা, যে বাসনা হৃদয়ে প্রজ্বলিত তা স্তিমিত হতে চায় না। মঈনুদ্দিন কাজলও প্রেমের এমনই এক কাহিনী তুলে ধরেন যেখানে পাওয়ার তীব্র বাসনা জেগে থাকে।
এই অপরিহার্য বাস্তবতাতেই আমরা মঈনুদ্দিন কাজলের উপন্যাসে লক্ষ্য করি, প্রেমের সরল উপাখ্যান যেখানে ভালোবেসে পাওয়ার এক তীব্র বাসনা স্পষ্ট। যেখানে সাবরিনা রায়হানের কথা ভাবে, তখন ভাবে_ যখন আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ জ্বলজ্বল করছে। আর সেই আলো সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন এক মায়াময় পরিস্থিতির মধ্যেই যে ভালোবাসার মানুষটির কথা ভাবনায় আসে, এ আবেগকে উপস্থাপনের মধ্য দিয়েই শুরু হয় উপন্যাসের। এরপর বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে এড়িয়ে যেতে থাকে কাহিনী। হাতে হাত, ভালোবাসার মানুষের সানি্নধ্য, পরস্পরের কাছে আসার তীব্রতা এ সবই। আর এসব উপস্থাপনের মধ্য দিয়েই লেখক যেন এমন এক দৃশ্য তুলে আনেন তা পাঠকের হৃদয়কেও আন্দোলিত করে। কাহিনীর ভেতরে যে বোধ তা প্রাত্যহিক ঘটমান বিষয়গুলোকেই নতুন উন্মাদনায় প্রতিস্থাপন করতে চায় পাঠকের মননে। উপন্যাসের নায়ক অসুস্থ হয়েও হাসপাতালে যখন অপারেশন করবে তখন তার কাছে জীবনের ভয়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে প্রিয় মানুষটির মুখ। যদি রায়হান মারা যায় তবে সাবরিনার কী হবে? এমন প্রেমের অনুভূতি সত্যিই জীবনের পরতে পরতে এক অপূর্ব দোলাচলে উন্মাদ করে দেয় মনকে। মঈনুদ্দিন কাজলের এই পথচলা আরো সুদূর হোক। তার জন্য শুভ কামনা।
প্রকাশক : রিদম প্রকাশনা সংস্থা
প্রচ্ছদ : মোমিন উদ্দীন খালেদ
মূল্য : ১৫০ টাকা

যত দূরে যাও
'যত দূরে যাও' উপন্যাসের নামকরণের মধ্য দিয়েই প্রিয়জনের দূরে চলে যাওয়ার এক হাহাকারের ছবি ভেসে ওঠে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এই প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতও থাকে যে, দূরত্বও প্রেমের কাছে কিছু নয়! অর্থাৎ দূরত্ব প্রেমের অনুভবকে মস্নান করতে পারে না। সত্যিকারের প্রিয়জন দূরে গেলেও প্রিয়ই থেকে যায়। উপন্যাসেও লেখক বর্ণনা করেন প্রিয়জনের এমনই দূরে যাওয়ার এক প্রতিচ্ছবি যেখানে প্রিয় মানুষ দূরে গেলে যেন অনুভূতিগুলো আরো বেসামাল হয়ে উঠতে চায়। উপন্যাসেই দেখা যায় নায়ক তার নায়িকার চলে যাওয়ার আগমুহূর্তে বলে, 'আমি তোমাকে থামাতে আসিনি। সে অধিকারও আমার নেই। যেখানেই যাও, যত দূরে যাও, ভালো থেকো।' একজন প্রেমিকের এই চাওয়ার মূল্য কতখানি? এই অমীমাংসিত বিষয় আমলে নিয়েই এই সত্য অস্বীকার করা যায় না যে, চলে যাওয়া, কাছে আসা সবই প্রেমের এমন এক আস্ফালন যা মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণভাবেই অনুরণন তোলে। চলে যাওয়ার যন্ত্রণা বুকে নিয়েই মানুষ বাঁচতে চায় আবারো। লেখক সহজভাবে এরকমই এক বিয়োগান্ত কাহিনী বর্ণনা করেন। পাঠকের হৃদয়েও একধরনের বিয়োগান্ত অনুভবকে টেনে বের করে আনেন।
আর এটা বলা জরুরি যে, প্রেমের মিলনের অনুভূতি যেমন উন্মাদনার তেমনি বিয়োগান্ত বিষয়গুলোও ক্রিয়াশীল। এ উপন্যাসেও লেখক প্রেমের এমনই এক অপূর্ব কাহিনী উপস্থাপন করেন। যেখানে পাঠকেরও মন বিষাদগ্রস্ত হতে পারে অনুভূতির সঙ্গে মিশে। মোহাম্মদ আলী কাওসার আগামীতে আরো বেশি দক্ষতার স্বাক্ষর রাখবেন, আরো অনুভূতির ধারালো লেখনীতে পাঠককে তৃপ্ত করবেন_ সে প্রত্যাশাই রইল।
প্রকাশক : শোভা প্রকাশ
প্রচ্ছদ : সুখেন দাস, মূল্য : ১২৫ টাকা

ত্রিতাল
ত্রিতাল নাম শুনলেই গানের কথা মনে আসে। হয়তো কবির গানের প্রতিও দুর্বলতা আছে। কবি এই কাব্যগ্রন্থের শুরুতে নিজেই বলেছেন, 'কবিতা গান আবৃত্তি_ এ আমার নিত্য সহচর'। কবির জীবনের এ বিষয়গুলো ও নিত্যনৈমিত্তিক জীবনযাপনের অনুভূতি যখন কবিতায় আনেন তখন ব্যঞ্জনাময় হয়ে ওঠে কাব্যিক ধারায়। ত্রিতাল কাব্যগ্রন্থে কবি তার কবিতার উপজীব্য হিসেবে অভিমান, ভালোলাগা-মন্দলাগা, প্রগাঢ় অনুভূতির দোলাচল, বিদ্রোহ, জটিলতাসহ বিভিন্ন বিষয় হাজির করেন। জীবনের একেকটি অনুভবকে তিনি যেভাবে তার কবিতায় উপস্থাপন করেছেন তা প্রশংসার দাবিদার। যদিও এই পথের শেষ নেই। ক্রমাগত সাধনাই কবিকে আরো শানিত করে। কিন্তু এটা বলা যায় যে, তামান্না জেসমিনের কবিতার পরতে পরতে তার মেধার স্বাক্ষর মেলে। তার কবিতায় যে ছবি অাঁকতে চান তিনি, তা জীবন্ত হয়ে ওঠে অনুভূতিতে। তামান্না জেসমিনের প্রথম কবিতাতেই তিনি এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন যা বৈষম্যহীন। তিনি আহ্বান জানান_ 'এসো শান্তির মিছিলে যোগ দিই/এসো সাম্যের পৃথিবী গড়ি'।
কখনো কখনো কবি খুব সহজভাবে এমন এক বিষয়কে আনেন যা হয়তো খুবই চেনা, কিন্তু তিনি যখন কাব্যিক ধারায় তা উপস্থাপন করেন তখন যেন তা আরো বেশি সাবলীল হয়ে ওঠে। খুব অবলীলায় তিনি পরম সত্যকে সহজভাবে বলতে পারেন। 'চলে যায়' কবিতায় দেখা যায় তার উপস্থাপন_ 'যে চলে যায়/সে আর ফিরে আসে না/তাকে পিছু ডেকে/কোনো লাভ নেই' এরকম সত্যর এক অমোঘ উচ্চারণ কবি তামান্না জেসমিনের কবিতাকে ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়।
প্রকাশক : বাংলালিপি
প্রচ্ছদ : জুবায়ের কেওলিন
মূল্য : ৩০০ টাকা
আহমেদ নিলয়

ক্যামেরার পেছনের মানুষ
এবার বইমেলায় 'দেশ পাবলিকেশন্স' থেকে প্রকাশিত হয়েছে কথাশিল্পী আখতার জামানের তৃতীয় গল্পগ্রন্থ 'ক্যামেরার পেছনের মানুষ'। মোট সাতটি গল্পের সঙ্কলন এটি। আখতার জামানের গল্পে মধ্যবিত্ত জীবনের অস্তিত্বের সঙ্কট, আনন্দ-বেদনা, আশা-নিরাশার চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সমাজ ও রাষ্ট্রে অসহায় ও বিচিত্র মানুষ তার গল্পে জায়গা করে নেয়। মানুষের লেবাসকে উন্মোচন করে, তার ভেতরের কদর্য ও সৌন্দর্যকে বের করে এনে পাঠকের সামনে প্রদর্শন করতে তিনি সিদ্ধহস্ত। গ্রন্থের প্রথম গল্প 'ডোম'। আমাদের সমাজে নিগৃহীত ডোমদের দুঃসহ জীবন ও প্রেম এবং বঞ্চনার চিত্র ফুটে উঠেছে এতে।
'বিবি চাপানো খেলা'য় চিত্রিত হয়েছে মফস্বলি রূপান্তরশীল জীবন। নগরায়ণের থাবায় গ্রাস হচ্ছে গ্রাম। ফলে চির চেনাজানা পরিবেশ ও মানুষজন বদলে গিয়ে অচেনা হয়ে উঠছে_ যা সত্যি উদ্বেগজনক।
ব্যঙ্গাত্মক ঢঙে লোভী, দুর্নীতিবাজ এক ভ- নেতার মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে 'হা-মুখ' গল্পে। মৃত্যুর পরও যেন তার সবকিছু গ্রাস করার ইচ্ছা দূর হয় না। আরো খেতে চায় সে।
একজন বিখ্যাত কবির পরকীয়া প্রেম লক্ষ্যযোগ্য হয়ে ওঠে 'একটি ইঁদুর, বিড়াল ও দত্তক বালকপুত্রের গল্প'-এ।
নগরে ভদ্রতার মুখোশ পরে একশ্রেণির অর্থলোভী মানুষ পতিতাবৃত্তি ব্যবসা চালায়। গ্রামের অসহায় মেয়েরা তাদের নিষ্ঠুর শিকারে পরিণত হয়। এসব মেয়ের অন্তর্গত যন্ত্রণার গল্প 'কাকটা এখন শহরের পাখি'।
সমাজ ও রাষ্ট্রে নির্যাতিত, নিষ্পেষিত নিম্নবর্গীয় মানুষের অসহায়ত্ব, দুঃখ-কষ্টকে পুঁজি করে মিডিয়া ও মিডিয়াকর্মীরা লাভবান হলেও, সেই অসহায় মানুষের ভাগ্যের কোনোই পরিবর্তন হয় না। চিরকাল তারা পড়ে থাকে অন্ধকারে। 'ক্যামেরার পেছনের মানুষ'-এ সত্যই উন্মোচিত হয়েছে।
'হলুদ পাখি-নীল পাখি' গল্পে নারী ও অর্থলোভী মানুষের চরিত্র নিখুঁতভাবে চিত্রিত করেছেন আখতার জামান। মানুষের অসহায়ত্বকে এসব মানুষ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে স্বার্থ হাসিলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।
আগের গল্পগ্রন্থ দুটিতে আখতার জামান হুমায়ূন আহমেদ দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। এ গ্রন্থে তিনি 'হুমায়ূন' মুক্ত হতে সর্বদা সতর্কদৃষ্টি রেখেছেন। তারপরও ছিটেফোঁটা প্রভাব থাকলেও থাকতে পারে। তবে সেটা তেমন দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। তার ভাষা গতিশীল। গল্পবয়নকৌশলে পাঠককে ধরে রাখার ক্ষমতা রাখে।
ক্যামেরার পেছনের মানুষ
আখতার জামান
দেশ পাবলিকেশন্স
প্রচ্ছদ _ মোস্তাফিজ কারিগর
মূল্য - ১৭০ টাকা।

সূর্যঘড়ি
'রাতের রূপ একবার যে দেখতে পেয়েছে তার কাছে সেটা উপেক্ষা করা প্রায় অসম্ভব। রাতের নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের একটা রূপ আছে, শান্ত বাতাসের একটা মধুরতা আছে, নির্জন নৈঃশব্দ্যের একটা মাদকতা আছে... কল্পনার রাজপুত্রের কথা বাদ দিয়ে রাতের এই নির্জনে নাছিমা একাকী জেগে সঙ্গীর অপেক্ষায় মগ্ন হয়ে আছে...।' (সূর্যঘড়ি, পৃঃ ৪৮)
বইয়ের নাম সূর্যঘড়ি। লেখক নতুন। ইদানীং কলরব করে খুব দ্রুত জনপ্রিয় হতে চায় তরুণ লেখকরা। কিন্তু নীরব সাহিত্য সাধনার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যায়। আবুল বাসারের এ বইটি পড়ে মনে হয়েছে, এই তরুণ যাপিত ও অনাগত সময়ের মাঝখানে দ্বিধার দোলাচলে দোলে। যায় দিন ভালো নাকি অপার সম্ভাবনায় আগামী আরো কল্যাণ নিয়ে আসবে আমাদের জীবনে! এ নিয়ে দ্বিধা। এই উপন্যাসের গল্পের পটভূমি ও কাহিনী প্রায় চলি্লশ বছর আগেকার সময়ের। যা পড়লে ফিরে যাবেন সেই জগতে, যা আপনি পেরিয়ে এসেছেন চলি্লশ বছর আগে। যখন আপনার বাবা-কাকারা লাঙ্গল-জোয়াল আর গরু দিয়ে জমিনে হালচাষ করতেন। এখন আপনি ইঞ্জিনচালিত ট্রাক্টরে খুব অল্প সময়ে হালচাষের কাজটা সেরে নেন। তখন চিঠির মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে যোগাযোগ করা হতো। এখন এসএমএস, ইন্টারনেট, ফেসবুক, আর স্কাইপির মাধ্যমে যোগাযোগ করতে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে সময় লাগে। সাদা-কালো টেলিভিশনটাতে অ্যালুমিনিয়ামের অ্যান্টেনায় সিলভারের পাতিলের ঢাকনা লাগিয়ে কত সাধনা করে বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিভিন্ন প্রোগ্রাম দেখতে হতো, এখন ঘরে রঙিন টেলিভিশন আছে, স্যাটেলাইট সংযোগে কত চ্যানেল দেখা যায়! তখন হয়তো আপনি আপনার বাবার আঙুল ধরে হেঁটে হেঁটে গঞ্জের হাটে যেতেন, আর হাটের মধ্যস্থলে ডালপালা মেলে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকা বুড়ো বটবৃক্ষের তলে লোকজনের সঙ্গে মিলিত হয়ে সাপ-বেজিতে লড়াই দেখার প্রত্যাশায় বড় বড় দাড়ি-গোঁফওয়ালা একটি লোকের লেকচার শুনে মুগ্ধ হতেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সাপ-বেজিতে লড়াই শুরু না করে লোকটি একটি চামড়ার ব্যাগ থেকে গাছের শেকড়-বাকড় দিয়ে তৈরি নানারকমের ওষুধ বিক্রি শুরু করতে দেখে বিরক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসতেন। কখনো সময় গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যেত। অবশ্য তখন সময় বোঝার উপায় ছিল না। কারণ তখনও মানুষ খুব বেশি ঘড়ি ব্যবহার করতে শেখেনি। তাছাড়া ঘড়ি সহজলভ্যও ছিল না। তাই মানুষ সময় নির্ধারণ করত আকাশের বুকে সূর্যের অবস্থান দেখে। সূর্যঘড়িই ছিল সময় নির্ধারণের একমাত্র উপায়। চলি্লশ বছর আগেকার সেই সময়ের মানুষের জীবনযাপন, আচার-আচরণের চালচিত্র বর্ণিত হয়েছে এই উপন্যাসের কাহিনীতে। বইটি অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশ করেছে_
লেখক : আবুল বাসার
প্রকাশক : দি রয়েল পাবলিশার্স
প্রচ্ছদ : সহিদুল ইসলাম রনি
পৃষ্ঠা : ৮০, মূল্য : ১৫০ টাকা
সমীর আহমেদ
- See more at: http://www.jjdin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=24-02-2015&feature=yes&type=single&pub_no=1112&cat_id=3&menu_id=75&news_type_id=1&index=1#sthash.uHxGY7nK.dpuf
EID MUBARAK to everybody